শাস্তির খাঁড়া শুধু সঞ্জয়ের ঘাড়ে নয়! বিচারপতির ১৭২ পাতার নির্দেশ নামায় পুলিশ, সন্দীপের নাম

Published on:

rg kar sealdah court

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: গত শনিবার থেকেই তৈরি হয়েছিল টানটান এক উত্তেজোনামূলক পরিস্থিতি। আরজি কর কাণ্ডে অন্যতম দোষী সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের শাস্তি নিয়ে চলছিল নানা উথালপাথাল পরিস্থিতি। শনিবার শিয়ালদা কোর্টে সঞ্জয়ের শাস্তি এবং সাজা ঘোষণা করলেও ঠিক কোন শাস্তি দেওয়া হবে সেই সময় জানানো হয়নি। বলা হয়েছিল সোমবার দিন ঘোষণা করা হবে। অবশেষে গতকাল অর্থাৎ সোমবার সেই উত্তেজনার অবসান হল। দোষী সঞ্জয় রায়ের আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করলেন শিয়ালদা আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক অনির্বাণ দাস। পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে নির্যাতিতার পরিবারকে ১৭ লক্ষ টাকা প্রদানের নির্দেশ দিলেন বিচারক।

পুলিশি তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন!

WhatsApp Community Join Now

আরজি করে মহিলা চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ-খুনের মামলায় দোষী সঞ্জয় রায়কে শুধুমাত্র শাস্তি ঘোষণাই করা হয়নি, বরং ১৭২ পাতার নির্দেশনামায় নিজের রায়ের বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন এবং তদন্তের নিরিখে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণও করেছেন বিচারক অনির্বাণ দাস।। জানা হয়েছে আরজি কর-কাণ্ডে পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিয়েও বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ রায়ের নির্দেশনামায় লিপিবদ্ধ করেছেন। বিচারকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, খুনের ঘটনা সামনে আসার পর FIR থেকেই পুলিশি তদন্তে খামতি থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। টালা থানার SI সুব্রত চট্টোপাধ্যায় নিয়ম এবং লালবাজারের তৎকালীন উইমেন্স গ্রিভ্যান্স সেলের অতিরিক্ত ওসি রূপালী মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়েও উঠছে নানা প্রশ্ন। বাদ যাননি আরজি কর হাসপাতালের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ভূমিকাও।

ফের উঠে আসল সঞ্জয়ের ভূমিকা

বিচারকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী জানা গিয়েছে ৯ আগস্ট রাতে সিনিয়র চিকিৎসক সুমিত রায় তপাদার ওই মহিলা চিকিৎসকের দেহ দেখে বুঝেছিলেন যে তাঁকে খুন করা হয়। তখন এই বিষয়টি চেস্ট মেডিসিন বিভাগের প্রধানকে জানাতে তিনি বলেছিলেন হাসপাতাল সুপার এবং অধ্যক্ষকে বিষয়টি জানাতে। এদিকে সুমিত যখন তৎকালীন সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠ এবং অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে ফোন করেন, তাঁরা ফোন তোলেননি। পরে সন্দীপ ঘোষ ফোন করে দেহ মর্গে নিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে কেন সন্দীপ ঘোষ ও মহিলা চিকিৎসকের দেহ মর্গে নিয়ে যেতে বলেছিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারক।

আরও পড়ুনঃ বন্ড থেকে আয়ের নিরিখে আঞ্চলিক দলের তালিকায় ১ নম্বরে তৃণমূল, লিস্টে বাকিরা কোথায়?

এদিকে আবার সঞ্জয়ের ফোন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ রয়েছে বিচারক অনির্বাণ দাসের নজরে। তাঁর মতে, গত ৯ আগস্ট রাতে অভিযুক্তের ফোন নিয়ে নাকি টালা থানায় রেখে দেওয়া হয়েছিল। আর সঞ্জয়ের ফোন রেখে দিয়েছিল লালবাজারের তৎকালীন উইমেন্স গ্রিভ্যান্স সেলের অতিরিক্ত ওসি রূপালী মুখোপাধ্যায় সেই কাজটি করেছিলেন বলে উল্লেখ আছে নির্দেশনামায়। যদিও তিনি জানিয়েছেন, সেই সময় ফোনে কোনও কারসাজি হয়েছে বলে প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু সেই যুক্তিতেও স্পষ্টতার ছাপ রয়েই গিয়েছে। তাহলে কেন এই কাজটি করা হয়েছে?

আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট মমতা

অন্যদিকে গতকাল বিচারকের রায়দানের পর মুর্শিদাবাদে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “আমি বিচারের রায় নিয়ে কিছু বলতে চাই না। আমাদের কাছ থেকে কেসটা ইচ্ছে করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমাদের হাতে থাকলে অনেক আগেই ফাঁসির অর্ডার করিয়ে নিতাম।” এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ফাঁসি হলে মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম। জানি না কী ভাবে লড়াই করেছেন, কী যুক্তি, সুতরাং ডিটেলস জানি না।” তবে তাঁর মন্তব্যের ভিত্তিতে আশঙ্কা করা হচ্ছে সরকার শিয়ালদা আদালতের এই রায়ের বিপক্ষে হয়ত হাইকোর্টে মামলা করতে পারে।

সঙ্গে থাকুন ➥
X