প্রীতি পোদ্দার, মেদিনীপুর: স্যালাইন কাণ্ডে (Saline Case) এখনও উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। গত শুক্রবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সিজারের পর পাঁচ প্রসূতি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয় গত শুক্রবারই। বাকিদের অবস্থারও অবনতি হয়। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে চিকিৎসার জন্য কলকাতার SSKM হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। বাকি একজন প্রসূতি রেখাকে মেদিনীপুরের মেডিক্যাল কলেজেই চিকিৎসা করানো হচ্ছিল। অভিযোগ উঠেছিল যে, প্রসূতিদের নিম্নমানের স্যালাইন দেওয়ার পরেই তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
ঘটনা ঘটার পরদিনই হাসপাতালে গিয়েছিল ১৫ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ বা এক্সপার্ট কমিটি। তারা স্বাস্থ্যভবনে রিপোর্ট জমা করে। এদিন সেই রিপোর্ট হাতে নিয়েই নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করেন মনোজ পন্থ। পাশে ছিলেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম। বৈঠকে জানিয়েছিলেন বিস্তারিত রিপোর্ট সামনে এলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এই তোলপাড় এবং বিতর্কের মাঝেই এবার মৃত্যু হল সেই অসুস্থ পাঁচ প্রসূতির তালিকায় থাকা রেখার সদ্যজাত সন্তান। কান্নায় ভেঙে পরে গোটা পরিবার।
মুচলেখায় সই করতে বলা হয় সন্তোষকে
গত ৮ জানুয়ারি রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মাতৃ বিভাগে মোট সাত জন প্রসূতির সিজার হওয়ার কথা ছিল। আর সেই তালিকায় শেষ নাম ছিল সন্তোষ সাউয়ের স্ত্রী রেখা সাউ এর। বাকিদের হাসপাতালের স্যালাইন দেওয়া হলেও, রেখার স্বামী স্ত্রীর জন্য বাইরে থেকে স্যালাইন এনে দেন। কিন্তু সেই সময় ডাক্তারেরা সন্তোষকে বলেছিলেন, রেখার অবস্থা ভালো না। স্ত্রী ও সন্তানের মধ্যে একজনকে বেছে নিতে বলা হয়। তার জন্য একটি মুচলেখায় সই করতে হবে। এদিকে বাবা, মায়ের সঙ্গে কথা বলে সন্তোষ স্ত্রীকেই বেছে নেন।
লড়াই থামল ১ সপ্তাহের সদ্যোজাত- র
পরে অবশ্য পুত্র সন্তানের জন্মও দেন রেখা সাউ। কিন্তু সদ্যোজাত শিশুটিও জন্মের পর থেকেই একাধিক শারীরিক সমস্যায় ভুগছিল। তাই জন্মের পর থেকেই ভেন্টিলেশনে রেখে তার চিকিৎসা চলছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। এদিকে রেখাকে জেনারেল বেডে রাখা হলেও, পরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তবে টানা চিকিৎসার পর রেখা সাউ সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু রেখার পুত্রের অবস্থা সঙ্কটজনক হতে থাকে। কিডনির রোগে কাবু হয়ে যায় শিশুটি। একটানা শিশুটির উপর নজরদারিও চালিয়ে রেখে চিকিৎসা করে চলেছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু সবটাই শেষে বৃথা হল। আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবারে মৃত্যু হল ১ সপ্তাহের এই সদ্যজাত শিশুর।
আরও পড়ুনঃ দু’বার ব্যর্থর পর সফল, মহাকাশে ইতিহাস লিখল ISRO! চতুর্থ দেশ হিসেবে নজির ভারতের
জানা গিয়েছে গতকাল অর্থাৎ বুধবার, চিকিৎসকেরা সন্তোষকে জানিয়েছিলেন, শিশুটির শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। অবস্থা এখনও সঙ্কটজনক। সাংবাদিকদের সামনেও রেখার স্বামী সন্তোষ বলেছিলেন, ‘৯৯ শতাংশ খারাপ, মাত্র ১ শতাংশ উন্নতি হয়েছে।’ কিন্তু আজ সকালেই যে এমন পরিণতি হবে কেউ ভাবতেই পারেনি। এদিন মেদিনীপুর মেডিক্যালসের শিশু বিভাগের প্রধান তারাপদ ঘোষ বলেন, ‘এ দিন সকালে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। ভেন্টিলেশন সাপোর্টে ছিল। আমরা সমস্ত চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু, চিকিৎসায় তেমনভাবে সাড়া দেয়নি। যার ফলে আমরা এই সদ্যোজাতকে বাঁচাতে পারলাম না।’
আরও পড়ুনঃ ১০ হাজার টাকার জন্য পিসিকে কুপিয়ে খুন ভাইপোর! খাস কলকাতায় ভয়ঙ্কর কাণ্ড
ভারত নয়, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিততে পারে এই দুই দল! হয়ে গেল ভবিষ্যদ্বাণী