প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই পড়ে গিয়েছে গরমের ছুটি। আর গরমের ছুটি পড়া মানেই সমতলের কাঠফাটা রোদ থেকে বাঁচতে অনেকেই পাহাড় ভ্রমণ। আর বাঙালির পাহাড় ভ্রমণ মানেই দার্জিলিং (Darjeeling), সিকিম, কার্শিয়াং ইত্যাদি নানা অফবিট জায়গা। সব মিলিয়ে পাহাড়ে এখন পর্যটনের ভরা মরসুম। কিন্তু বর্তমানে ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি, আর এই কারণে পর্যটনে এক বড় ব্যাঘাত ঘটাল। শেষ মুহূর্তে এসে এবার একের পর এক বুকিং বাতিলের হিড়িক পড়ল।
বুকিং বাতিল পর্যটকদের
গ্রীষ্মের ভরা পর্যটন মরশুমে একের পর এক ভ্রমণের টিকিট বাতিলের জেরে মহাবিপদে পড়েছে ট্রাভেল এজেন্টরা। আগাম টিকিট বুকিং এর টাকা এইভাবে হাতছাড়া হতে দিতে চাইছেন না কেউই। কারণ দার্জিলিং-র একটি বড় অর্থই আসে পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে। তাই সেখানে পর্যটকদের কদর অনেক বেশি। কিন্তু সেই পর্যটকদের সংখ্যা কমে যাওয়াতে মাথায় হাত অনেকের। এই টিকিট বাতিলের প্রসঙ্গ নিয়ে পর্যটকদের কাছে জানতে চাইলে বলা হয় ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের আবহে যদি কোথাও অশান্তি হয়, তাই সেই ভয়ে অনেকেই ফটাফট বুকিং বাতিল করে দেয়।
কেন এই সিদ্ধান্ত?
আসলে কাশ্মীরের পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের আকস্মিক হত্যার আতঙ্ক একেবারে নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। তাই সেক্ষেত্রে দার্জিলিংয়ে কোনও অশান্তি হবে না তো, পাহাড়ে গিয়ে বিপদে পড়ব না তো এই সব প্রশ্ন খালি ঘুরছে পর্যটকদের মাথায়। এছাড়াও রাজ্য সরকারের হঠাৎ করে সরকারি কর্মীদের ছুটি বাতিলটা একটা বড় প্রভাব ফেলেছে। তাইতো প্রতিবার যেখানে এই সময় দার্জিলিং পর্যটকদের ভিড়ে একেবারে গিজগিজ করে সেখানে এবার ছবিটা কিছুটা ভিন্ন। অশান্তি আবহের মাঝেই দোসর হয়ে উঠেছে মেরামতের জন্য ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধদশা।
মাথায় হাত ট্যুর অপারেটর সংস্থাগুলির
হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি সম্রাট স্যান্যাল বলেন, “আমারই ২১ লক্ষ টাকার বুকিং বাতিল হয়েছে। এদিকে সমস্ত ট্যুর অপারেটরদের বুকিং বাতিলের সংখ্যা হিসেব করলে যে সংখ্যা দাঁড়াবে, তা অপরিকল্পনীয়। আমার প্রাথমিক ধারণা এবার পর্যটন শিল্পে ঘাটতি ৫০ শতাংশের বেশি হবে।” অন্যদিকে রাজ্য ইকো ট্যুরিজম কমিটির চেয়ারম্যান রাজ বসু বলেন, “খুবই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমরা পর্যটকদের আশ্বস্ত করছি। কিন্তু লাভ হচ্ছে না।”
আরও পড়ুনঃ ব্রাত্য কলকাতা! আইপিএলের নয়া সূচি জারি করল BCCI, KKR-র ম্যাচ কবে?
হোটেল বুকিং এর টাকা বা বাকি অন্য কিছু ক্ষেত্রে বুকিং এর টাকা যাও বা ফেরত পাওয়ায় যায় কিন্তু জয়রাইডের টাকা একদমই ফেরত পাওয়া যায় না। তবুও সেই টাকার মোহ ভুলে নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে এবার অনেকেই ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান বাতিল করছেন। ট্যুর অপারেটর সংস্থাগুলির সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গেও জিডিপির ক্ষেত্রে পর্যটন শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু জঙ্গি হামলায় পর এবার গ্রীষ্মের মরশুমে দার্জিলিং, কালিম্পং, ডুয়ার্সে পর্যটকদের চিত্র অনেকটাই বদল যেতে চলেছে।।