প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের (Taruner Swapna Scheme) মাধ্যমে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই বরাদ্দ অর্থ তছরুপের অভিযোগ ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে। কিছু দিন আগেই সাইবার জালিয়াতির ঘটনায় ট্যাবের টাকা উধাও করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পূর্ব মেদিনীপুরের ৪টি স্কুলে। তদন্তে নেমে জেলা শিক্ষা দফতরের আধিকারিকরা জানতে পারেন, ওই ৪টি স্কুলের একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া মোট ৭০ জন ছাত্রছাত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর হ্যাক করে টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। যা নিয়ে তৈরি হয়েছে এক ভয়ংকর উত্তেজনা।
সরাসরি প্রশ্ন তোলা হল শিক্ষকদের বিরুদ্ধে!
কিন্তু এই সাইবার জালিয়াতির অভিযোগ একদমই মানতে নারাজ শিক্ষা দফতর। গতকাল অর্থাৎ সোমবার শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, কোনো অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়নি। স্কুলের যে সব শিক্ষক পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্ট নম্বর পোর্টালে তুলেছেন, তাঁদের ভুলেই হয়তো কিংবা অসতর্কতায় নম্বর লিখতে ভুল করেছেন। অথবা ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল লেখা হয়েছে। তাই এবার FIR দায়ের হয়েছে। অপরদিকে আরেক শিক্ষাকর্তা জানান, টাকা উদ্ধার হলে ফের পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। শিক্ষা দফতরের এমন অভিযোগে ক্ষিপ্ত শিক্ষকদের একাংশ।
এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্র জানান, পড়ুয়াদের হ্যাক হওয়া অ্যাকাউন্টের টাকা তো প্রধান শিক্ষকের অ্যাকাউন্টে যাচ্ছে না। তা হলে তাঁকে কেন দোষী বলা হচ্ছে শিক্ষা দফতরের তরফ থেকে। তদন্ত করে দেখা হোক। অন্যদিকে পূর্ব মেদিনীপুরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানা, পুজোর আগে অর্থাৎ চতুর্থীর দিন ট্যাব কেনার ১০ হাজার টাকা পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছিল। কিন্তু বাংলা শিক্ষা পোর্টালের সার্ভার অনেক সময়েই ডাউন থাকায় কোনও কোনও ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট নম্বর আপলোড করা যাচ্ছিল না। তাই গোটা সমস্যাই প্রযুক্তিগত। তাই এই সমস্যার দিকে নজর না দিয়ে প্রধান শিক্ষকদের দোষারোপ করা একদমই ঠিক নয়।
সরাসরি ট্যাব কেনার পথে সরকার!
আর তাই এবার ট্যাব কেনার টাকা নিয়ে অন্য উদ্যোগের কথা শোনা গেল আরেক প্রধান শিক্ষকের মুখে। বাঙুরের নারায়ণ দাস মেমোরিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়ার অভিযোগ শুধু হ্যাক হওয়ার সমস্যা যে তা নয়, অ্যাকাউন্টে টাকা পেয়ে অন্য কাজে ব্যবহার করার অভিযোগও শোনা গিয়েছে। তাই সরকারের উচিত অ্যাকাউন্টে টাকা না দিয়ে সরাসরি ট্যাব কিনে দেওয়া। তাহলে এ সব ঝামেলা আর থাকবে না। তবে এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সরাসরি জানান যে ট্যাব কিনে দেওয়া হবে কি না, সেই নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। যদি মনে করা হয় এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যায় তাহলে শিক্ষা দফতর সব দিক খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে।