প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: গত কয়েক মাসে কলকাতার বুকে গার্ডেন রিচের বাড়ি ভেঙে পড়া থেকে শুরু করে, বাঘাযতীন, ট্যাংরায় আবাসন হেলে যাওয়া পরপর নির্মাণ কাজে বিপর্যয় নেমে আসায় স্বাভাবিকভাবেই বেশ চাপে পড়েছে কলকাতা পুরসভা। রীতিমত জনসাধারণের রোষের মুখে পড়েছে পুরসভা। তবে ইতিমধ্যে বেশকিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বাড়ি নির্মাণ নিয়ে একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করেছে পুরসভা। তবে সম্প্রতি এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুরসভা (Kolkata Municipal Corporation)।
অনেক আগেই ফিরহাদ হাকিম কলোনির জমিতে বাড়ি তৈরি নিয়ে নয়া নিয়ম আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন। তবে এবার মাত্র আধ কাঠা জমিতে বাড়ির প্ল্যান অনুমোদনের ক্ষেত্রে বড় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে পুরসভা। গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানের পর কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এই সিদ্ধান্ত নেন। তিনি এই বিষয়ে জানান যে, “আধ কাঠা হোক অথবা এক কাঠা এখন থেকে ছোট জমিতেও বাড়ি তৈরির অনুমোদন দেওয়া হবে। সম্প্রতি মেয়র পরিষদ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন হয়েছে। তাই সেই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু ছোট জমিতে বিশেষ ছাড় দিয়ে বৈধ বিল্ডিং প্ল্যানের অনুমোদন দেওয়া হল।”
বাড়ি নির্মাণ পরিকল্পনায় বড় সিদ্ধান্ত মেয়রের
এছাড়াও এদিন মেয়র ফিরহাদ হাকিম কলকাতার বাসিন্দাদের কাছে অনুরোধ করে জানিয়েছেন যে, “জমি ছোট হলেও, এখন বিল্ডিং প্ল্যান পুরসভা অনুমোদন দেবে। তার উপর সমানুপাতিক হারে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। তাই প্ল্যান স্যাংশন করে নিজের বাড়ি তৈরি করুন। কিন্তু যদি পুরসভার অনুমতি ছাড়া বাড়ি তৈরি করেন তাহলে আপনারাই বাড়তি বিপদে পড়বেন।” এই সিদ্ধান্তের ফলে কলকাতা পুরসভা মনে করছে যে, এই নতুন নিয়ম চালু হলে সাধারণ মানুষ যেমন আইনি বৈধতা মেনেই বাড়ি তৈরি করতে পারবেন ঠিক তেমনই ভবিষ্যৎ এ তাঁদের বাসস্থান নিয়ে কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না। এইমুহুর্তে বাড়ি নির্মাণ পরিকল্পনার অনুমোদনের জন্য প্রথমে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছে যাবে। এরপর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা পাঠানো হবে নবান্নে। সেখান থেকেই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মেয়রের মাস্টারস্ট্রোক
পাশাপাশি আধ কাঠা জমিতে দোতলা পর্যন্ত তোলা যাবে বাড়ি। অর্থাৎ ৩২০ বর্গফুটেই দোতলা বাড়ি করতে পারবেন নাগরিকরা । সাধারণ ক্ষেত্রে যেখানে ২.৫ – ৩ ফুট ন্যূনতম ছাড় দিতে হয়, সেখানে ছাড়ের পরিমাণ অর্ধেক হবে । শুধু তাই নয়, সাধারণ ক্ষেত্রে নকশা অনুমোদনে বর্গফুট প্রতি ৩০ টাকা করে ফি দিতে হয়। সেটাও এবার কমিয়ে অর্ধেক করা হবে। কিন্তু এই সব সুযোগই মিলবে ঠিকা ও কলোনি জমির ক্ষেত্রে। বস্তুত এই আধ কাঠায় বাড়ি নির্মাণের প্ল্যান তাও অর্ধেক ফি দিয়ে এই গোটা বিষয়টি মেয়রের মাস্টারস্ট্রোক বলে অনেকে অভিহিত করছেন। কারণ সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। তাই মহানগরের নিম্ন মধ্যবিত্ত ও গরিব ভোটারদের মন জয় করে তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্ক আরও মজবুত এই উপায় অন্যতম শ্রেষ্ঠ বলা যায়।
আরও পড়ুনঃ ‘ভুলে যাচ্ছেন এটা হাইকোর্টের অর্ডার’, বিচারপতি ঘোষের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে রাজ্য সরকার
অন্যদিকে এদিন মেয়র পরিষদ বৈঠকে শহরে নতুন করে আরও ৪টি জায়গায় ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। আর সেই নির্বাচিত চারটি জায়গা হল খিদিরপুরের ৪৬ নম্বর অরফানগঞ্জ মার্কেট, শশীশেখর বোস রোড, কেওড়াপুকুর এস টি পি এবং ৩/১/১, জে কে ঘোষ রোডের রসগোল্লা পট্টি। ইতিমধ্যেই জে কে ঘোষ রোডের রসগোল্লা পট্টিতে ‘বাংলার বাড়ি’ নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও এই ৪ জায়গা বাদে আরও ১৬টি জায়গাকে চিহ্নিত করা হয়েছে বাংলার বাড়ি প্রকল্পে। প্রতি পরিবারের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ২৭০ থেকে ২৭৫ বর্গফুট জায়গা।