কথাতেই আছে যে ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। আর এই কথাটি ঘাটালের এক ব্যক্তির ক্ষেত্রে যেন দিনের আলোর মতো সত্যি প্রমাণিত হল। তিনি এমন এক কাজ করে দেখিয়েছেন যা এখনও অবধি কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা মন্ত্রী অবধি করতে পারেননি। চলতি বছরের লোকসভা ভোটের মাঝে ঘাটালেন নিজামপুর গ্রামের গোপাল মল্লিক এমন এক কাজ করলেন যার পরে তিনি সকলের কাছে এখন ‘সুপারহিরো’। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন।
আশেপাশের ১৫ থেকে ২০টি গ্রামের মানুষের কষ্ট লাঘব করতে নিজের গ্যাঁটের কড়ি খরচা করে আস্ত একটা ব্রিজ তৈরি করে ফেললেন গোপাল মল্লিক। প্রশাসনের ওপর ভরসা না রেখে দিনের পর দিন টাকা জমিয়ে তিনি ২৪ লক্ষ টাকা মতো জমিয়েছিলেন। আর সেই টাকা দিয়েই সকলের সুবিধার জন্য একদম হুগলী সেতুর আদলে একটি ব্রিজ বানালেন। এদিকে গোপালবাবুর এহেন কাজে সকলেই সাধুবাদ জানিয়েছেন।
এই ঘাটালেই এবারে একদিকে যখন তৃণমূলের তরফে প্রার্থী করা হয়েছে দেবকে। অন্যদিকে বিজেপির তরফে প্রার্থী করা হয়েছে হিরণকে। কিন্তু ভোট আসে ভোট যায়, সাধারণ মানুষের আর কষ্ট লাঘব হয় না। সকলের একটাই কথা, যা প্রশাসনের করা উচিৎ ছিল যা করে দেখালেন গোপাল মল্লিক। আর গোপালের এই ব্রিজ বানানোর কারণে উপকৃত হলেন এক ধাক্কায় কয়েক হাজার গ্রাম। নিজামপুর তিলন্দ, বালক রাউত, রবিদাসপুর, সৈয়দ করিম, নন্দনপুর, বসন্তপুর, গোবিন্দনগর গ্রামের মতো প্রায় ১৫-২০ টি গ্রামের মানুষ এখন এই ব্রিজের ওপর দিয়ে নির্ঝঞ্ঝাটভাবে যাতায়াত করতে পারবেন।
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, দাসপুরের নিজামপুর ও পার্বতীপুরের মাঝে কাঁসাই নদীতে বাঁশের সাঁকো ছিল পারাপারের মূল ভরসা কিন্তু প্রতি বছর বর্ষায় বন্যার জল বাড়লে তা ভেঙে যায়। এদিকে এই সেতু ভেঙে যাওয়ার কারণে বহু মানুষকে সমস্যার মধ্যে পড়তে হত। আর তা-ই মেনে নিতে পারছিলেন না গোপাল মল্লিক। মনে মনে স্থির করে নেন, এই নিয়ে কিছু করতেই হবে। এরপরেই শুরু হয় তাঁর লড়াই। তিলে তিলে টাকা জমিয়ে আস্ত ব্রিজ বানালেন তিনি। একদম পাকাপোক্ত ব্রিজ গড়েছেন তিনি।
এই বিষয়ে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানান, “কষ্ট, চোখের সামনে মানুষকে ভীষণ কষ্ট পেতে দেখেছি। নেতামন্ত্রীদের আশ্বাস শুনেছি প্রচুর। নিজেই নৌকা পারাপার করতাম। সারাদিন ধরে চোখের সামনে যা দেখতাম, তারপরই ভেবেছিলাম একটা ব্রিজ বানাব।” অন্যদিকে গ্রামবাসীরা গোপালবাবুকে রীতিমতো ভগবানের সমান ভাবছেন। তাঁদের বক্তব্য, টাকা তো অনেকেরই থাকেন কিন্তু ভাবেন আর ক’জন।