প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ছাত্র জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা হল মাধ্যমিক। যেটা নিয়ে পড়ুয়া সহ অভিভাবকদের মনে এক দারুণ উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকে। এছাড়াও এই মাধ্যমিক নিয়ে অনেকের মনে নানা স্বপ্ন থাকে। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের সামর্থ্য সকলের কাছে সমান থাকে না। ঠিক এমনই পরিস্থিতি সনিয়া ঘোষ এবং প্রিয়াঙ্কা প্রামাণিকের। কিন্তু এবার সেই আর্থিক প্রতিকূলতাকে পিছনে ফেলে স্বপ্ন পূরণের তাগিদে সফলতা অর্জন করল এই দুই নাবালিকা।
মাধ্যমিকে দুর্দান্ত রেজাল্ট এই দুই ছাত্রীর
আজ প্রকাশিত হল চলতি বছরের মাধ্যমিক পরিক্ষার ফলাফল (Madhyamik Result 2025)। আর তাতেই বাজিমাত করল দক্ষিণ কলকাতার ফুটপাতে থাকা সনিয়া ঘোষ ও প্রিয়াঙ্কা প্রামাণিক এর। গোটা বছর অর্থাৎ শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা ফুটপাতে খোলা আকাশের নীচেই দিন কাটে তাঁদের। উৎসব সকলের কাছে আনন্দের মুহূর্ত হলেও তাঁদের কাছে আর পাঁচটা দিনের মতো স্বাভাবিক ভাবেই চলে। পরিবারে বাবা থেকেও নেই। রয়েছেন মায়েরা। দুজনেই ছোট থেকে লেখাপড়া নিয়ে বেশ আগ্রহী ছিল। কিন্তু অভাবের সংসারে দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারে সন্তানদের কীভাবেই বা লেখাপড়া শেখাবেন তা নিতে চিন্তায় থাকত সকলে। কিন্তু এই আর্থিক বাঁধা সহ কোনো প্রতিকূলতা এই দুই মেয়ের স্বপ্নে বাঁধা দিতে পারেনি।
সাহায্যের হাত বাড়াল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি
তাইতো এই দুই নাবালিকার জীবনে দেবদূতের মতো মিত্রবৃন্দা ঘোষকে পাঠিয়ে দেন ভগবান। তাঁদের পড়াশোনার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন টালিগঞ্জ রামধনু ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। বছর ছয়েক আগে মিত্রবৃন্দারই একদিন চোখে পড়ে শিশু দুটিকে। তাঁদের চোখে পড়াশোনার খিদেটাকে স্পষ্ট দেখতে পান তিনি। তাইতো আগে পিছে না ভেবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মিত্রবৃন্দা। তিনি সনিয়া, প্রিয়াঙ্কার জন্য নিয়ম করে নিয়ে যেতেন রঙ পেন্সিল, ছবি আঁকার অন্যান্য সরঞ্জাম। সেই সঙ্গে ফুটপাতের সবার জন্য যেত খাবার। এরপরে আসে করোনা মহামারি।
কিন্তু মহামারী পর্ব থাকলেও সনিয়া এবং প্রিয়াঙ্কার পড়াশোনার জন্য ব্যাঘাত ঘটেনি। অতিমারী পর্ব কাটতেই রীতিমতো পরীক্ষা দিয়ে স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয় প্রিয়াঙ্কা আর সনিয়াকে। এইভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয় মাধ্যমিকের। অবশেষে একজন কালীধন ইনস্টিটিউশন ফর গার্লস, অন্যজন টালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে চলতি বছরের মাধ্যমিকে। দু’জনেই দুশোর উপরে নম্বর পেয়েছে। খুব খুশি দুই পরিবার সহ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। বড় হয়ে কী হতে চাও জানতে চাওয়ায় সোনিয়া নিজে খুব ভাল অঙ্কনশিল্পী, তাই বড় হয়ে ট্যাটু আর্টিস্ট হতে চায়। যদিও প্রিয়াঙ্কা আগে লেখাপড়া করতে চায়। পরের চিন্তা তখন করবে বলে জানিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ চারিদিক হবে লণ্ডভণ্ড, একটু পরেই দক্ষিণবঙ্গের ৩ জেলায় চরম তাণ্ডব! কতদিন চলবে দুর্যোগ?
এই প্রসঙ্গে মিত্রবৃন্দা দেবী জানিয়েছেন যে, “ফুটপাতে যা থাকে তাদের তো আর পড়াশোনা বলে কিছু থাকে না। আমি এই পরিস্থিতির বদল ঘটাতে চেয়েছিলাম। মেয়ে দুটো এই সংকল্পে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। আমি আশীর্বাদ করি ওরা জীবনে আরও বড় হোক, সকল স্বপ্ন পূরণ করুক। এদিকে মাধ্যমিকের ফলাফল দেখে দু’চোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে প্রিয়াঙ্কা, সনিয়ার। তাঁদের একটাই কথা, “ম্যাডাম না থাকলে তো পড়াশোনাটাই হত না!” তবে পাশ করলেও একটাই প্রশ্ন ঘুরছে তাঁদের মাথায়। আর সেগুলি হল এরপর উচ্চশিক্ষার কী হবে?
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |