প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: নিত্যদিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যেন লাগামছাড়া ভাবে বাড়ছে। সামান্য চাল ডাল কিনতে গেলেও এখন অনেক ভাবনা চিন্তা করতে হচ্ছে। তার উপর রোজগার কম। আর এই আবহেই এবার রাজ্যে সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণ নিয়ে নতুন নিয়ম চালু হতে চলেছে। জানা গিয়েছে আগামী পাঁচ বছরে সম্পত্তির মূল্য ১০% হারে বৃদ্ধি পাবে। যা নিয়ে বেশ চাপে পড়েছে মধ্যবিত্তরা।
১০% হারে বৃদ্ধি পাবে সম্পত্তির মূল্য
সূত্রের খবর, রাজ্যে সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণে নতুন নিয়ম চালু হতে চলেছে। ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন বিল, ২০২৪’ এবং ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল বিল, ২০২৪’ এই দুই বিল রাজ্য সরকার বিধানসভার চলতি অধিবেশনে আগামী সোমবার পেশ করতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে প্রতি বছর সম্পত্তির মূল্য ১০% হারে বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ, যদি পাঁচ বছর অন্তর সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন না-ও হয়, তবে আগের হিসাবের উপর ১০% করে মূল্য বাড়ানো হবে। যার ফলে এবার বাড়তি করের বোঝা চাপবে নাগরিকদের উপর।
বিলে পুর দফতরের বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রেই সম্পত্তির বার্ষিক মূল্য স্থির করা মুশকিল। তা ছাড়া, পুর-নিগমের বাইরে অন্য পুর এলাকাতেও ফাঁকা জমি বা বাড়ির ব্যবহারের ধরন বদলাচ্ছে। তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। পাঁচ বছরে সেই প্রক্রিয়া না-হলে সব ক্ষেত্রেই ১০% হারে মূল্য বেড়ে যাবে। আসলে রাজ্যের পুর-এলাকাগুলিতে সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণের জন্য ‘ভ্যালুয়েশন বোর্ড’ কাজ করে। যার ফলে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর এই বোর্ডের মাধ্যমে সম্পত্তির বার্ষিক মূল্য বা ‘অ্যানুয়াল রেন্টাল ভ্যালু’ নির্ধারণ করা হয়, যার ভিত্তিতে পুর কর্তৃপক্ষ সম্পত্তি কর নেন।
সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণে দুর্নীতির ছায়া
রাজ্যে সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণ নিয়ে এর আগে দুর্নীতির নানা অভিযোগ উঠে এসেছে। বাম আমলে রাজ্যে সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব ছিল বেসরকারি সংস্থার হাতে, তাতে দুর্নীতির নানা অভিযোগ উঠেছিল। পরবর্তীকালে, প্রবীণ কোনও আইএএস অফিসারের নেতৃত্বে ভ্যালুয়েশন বোর্ড গঠন করা হয়েছিল এবং প্রতি পাঁচ বছরে মূল্য নির্ধারণ করা হত। এআরভি ঠিক হওয়ার পর, কর দেওয়ার ক্ষেত্রে যদি কোনও অভিযোগ বা আপত্তি থাকত, তবে সেই অভিযোগ পর্যালোচনা করার জন্য একটি ‘ডিজপোজাল কমিটি’ও ছিল।
কী বলছেন বাম আমলের পুরমন্ত্রী?
সেই প্রসঙ্গে, বাম আমলের পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের জানিয়েছেন, ‘‘পাঁচ বছর অন্তর ভ্যালুয়েশন বোর্ডের মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণ বাধ্যতামূলক থাকা উচিত। সেক্ষেত্রে পাঁচ বছর অন্তর প্রক্রিয়া হলে এআরভি কমতেও পারে, বাড়তেও পারে। নতুন বিলে বিত্তবান বা গরিব, সকলের জন্য একই হারে মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হবে। তবে সেক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থা অযৌক্তিক, এতে দুর্নীতিও বাড়বে।’’ তবে পুর দফতরের এক কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘সম্পত্তি কর দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি রেট চার্ট অনুযায়ী স্ব-মূল্যায়ন করে হিসেব জমা দিতে পারবেন। সংশোধনী বিলে সেই সংস্থান থাকছে।’’