প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: দিনের পর দিন রাস্তায় দুর্ঘটনার খবর যেন উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। কিন্তু তবুও বাস চালকদের বেগতিক মনোভাব কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না রাজ্য সরকার। কিছুদিন আগেই বেসরকারি বাসের ধাক্কায় সল্টলেকে পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনায় তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়েকটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল সেই বৈঠকে। এই আবহে ফের গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার যানজট পূর্ণ রাস্তায় বেপরোয়া বাস চালানো রুখতে একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে। আর সেই ছয় পাতার এই গাইডলাইনে চালক কন্ডাক্টরদের আচরণ থেকে শুরু করে দুর্ঘটনা ঘটলে তাদের কী করণীয়, তার যাবতীয় বিষয় লেখা রয়েছে।
নয়া অ্যাপের মাধ্যমে চালকের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ
এবার সেই নির্দেশিকায় এই প্রথম বাস চালকদের সরাসরি অ্যাপের মাধ্যমে ডিজিটাল নজরদারির আওতায় আনার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। বিধি অনুযায়ী, চালক বাসের স্টিয়ারিংয়ে বসার আগেই নির্দিষ্ট অ্যাপে লগ ইন করতে হবে তাঁকে। যতক্ষণ ওই বাস চলবে, অ্যাপের মাধ্যমে বাসের গতিবিধি নজরে রাখবে সরকার। এই অ্যাপের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় পরে তথ্য বিশ্লেষণ করে চালকের মধ্যে নিয়ম ভাঙার প্রবণতা ফুটে উঠলে তাঁর নামে SMS মারফত সতর্কবার্তা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পরিবহণ দফতর। যদি দেখা যায় বাসচালক বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালাচ্ছে তাহলে চালকের লাইসেন্স সাময়িক ভাবে তখনই ‘ব্লক’ করা হতে পারে। চালক কেমন গতিতে বাস ছোটাচ্ছেন, কোথায় কত ক্ষণের জন্য থামছেন, পুরো রুট ধরে যাতায়াত করছেন কি না, নিয়ম ভেঙে সীমার বাইরে গতি বাড়িয়ে ছুটছেন কি না, সবই নজরে রাখবে মোবাইলের অ্যাপ।
ড্রাইভারের লাইসেন্সের কপি বাসে আটকে রাখতে হবে
গাইডলাইনে আরও বলা হয়েছে যে শহরের রাস্তায় আগামীদিনে টাইম টেবিল মেনে চলতে হবে। তা ছাড়া কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে সেই বিষয়ে চালক বা কন্ডাক্টর যাতে থানায় ফোন করে জানান সে বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। এবং বলা হয়েছে বাস মালিক যেন চালক ও কন্ডাক্টরদের নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁদের অতীতের কাজের অভিজ্ঞতা বা কোনও অভিযোগ রয়েছে কি না তা যেন খতিয়ে দেখে। এবং প্রতিটি বাস চালক এবং কন্ডাক্টরদের লাইসেন্সের কপি বাসে আটকে রাখার কথা জানানো হয়েছে।
প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা বা রিফ্রেশার কোর্স করানো হবে
পাশাপাশি বাসে ‘ব্রিদ অ্যানালাইজার’ বা নিঃশ্বাসে মাদকের উপস্থিতি যাচাই করার যন্ত্র রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই যন্ত্রে চালকের সুস্থতা যাচাই করে তবেই বাস চালানোর কথাও রয়েছে বিধিতে। এ ছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে রাস্তায় বাস চালকদের যত্রতত্র পরীক্ষা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। রাস্তার বাঁ দিক ঘেঁষে নির্দিষ্ট লেন বজায় রেখে বাস চালানোর পাশাপাশি নির্দিষ্ট বাসস্টপে বাস থামানোর কথাও রয়েছে। এছাড়াও পরিবহণ দফতর এবং পুলিশের সাহায্য নিয়ে চালক ও কন্ডাক্টরদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা বা রিফ্রেশার কোর্স করানো হবে বলে জানা গিয়েছে।
কী বলছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী?
বাসে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা, যাত্রীদের অভিযোগ জানানোর খাতা, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, খারাপ যন্ত্রপাতি নিয়ে বাস চালানো যাবে না। বিধি অনুযায়ী, প্রতিদিন বাস চালানোর আগে চালকদের ব্রেক, ইঞ্জিন-সহ গাড়ির নির্দিষ্ট যন্ত্র পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এই নতুন আদর্শ বিধি সম্পর্কে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, “বেপরোয়া গাড়ি চালানো বন্ধ করে পথ দুর্ঘটনা রুখতে সরকার বদ্ধপরিকর। নির্দিষ্ট নির্দেশিকা মেনে চালকদের গাড়ি চালাতে হবে। পাশাপাশি, তাঁদের গাড়ি চালানোর খুঁটিনাটির উপরে নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নজরদারি চলবে। তার প্রস্তুতিও চলছে।”