বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: বাংলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে বহু স্মৃতি বিজড়িত স্থান। সেসব জায়গায় একটা সময় অবাধ বিচরণ ছিল রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে সুভাষচন্দ্র বোস কিংবা মহাত্মা গান্ধীদের মতো মনীষীদের। তবে বর্তমানে সেসব জায়গা জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তেমনই এক ঐতিহাসিক স্থান শতাব্দি প্রাচীন শিলিগুড়ি টাউন স্টেশন (Siliguri Town railway station)।
হ্যাঁ, একটা সময়ে কলকাতা কিংবা দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ অথবা দার্জিলিংয়ের সাথে যোগাযোগের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল এটি। রবীন্দ্রনাথ, বাঘাযতীন এবং সুভাষ চন্দ্রের মতো বহু মনীষীর পায়ের ধুলো পড়েছে এই স্টেশনে। তবে বর্তমানে এই স্মৃতি বিজড়িত স্থানটির অবস্থা ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য।
জরাজীর্ণ অবস্থায় বহুকাল ধরে পড়ে রয়েছে এই স্টেশন। স্টেশনের প্রতিটি পিলারে জেঁকে বসেছে অবহেলার ছাপ। আবর্জনা ও জঞ্জালেরস্তূপ শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনটিকে জরাজীর্ণ অবস্থায় পৌঁছে দিয়েছে। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে এবার সেই অবহেলিত স্থানে নজর দিয়েছে ভারতীয় রেল। বেশ কিছু সূত্র মারফত খবর, বাংলার অন্যতম ঐতিহ্যশালী ষ্টেশনটিকে আবারও পুনর্জীবিত করার পথে হাঁটছে রেল মন্ত্রক।
শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনের মর্যাদা হারাল এইভাবে
কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ অথবা দার্জিলিং যেতে যোগাযোগের প্রান্তিক ল্যান্ডমার্ক ছিল শিলিগুড়ির টাউন স্টেশন। আগে এই স্টেশন দিয়েই যেত দার্জিলিং মেল। পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে অধুনা বাংলাদেশ হয়ে হলদিবাড়ি থেকে শিলিগুড়ি টাউন। তবে এই রুট বদলে যায় স্বাধীনতার পর। রুট বদলাতেই গন্তব্য এক রেখে ঘুর পথে চলতে থাকে দার্জিলিং মেল।
ফরাক্কা হয়ে বিহারের মধ্যে দিয়ে চলতো ট্রেনটি। এরপরই ক্রমশ জনসংখ্যা বাড়ল শিলিগুড়ির। ফলত, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও চাহিদার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হলো শিলিগুড়ি জংশন ও এনজিপি দুটি নতুন স্টেশন। আর এই দুই স্টেশন তৈরির পরই ধীরে ধীরে ট্রেন সংখ্যা কমতে থাকে শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনে। একটা সময়ে এই স্টেশনটিকে একপ্রকার বাতিলের খাতায় রেখে বাকি দুই স্টেশন দিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের সাথে যোগাযোগ ধরে রেখেছিল রেল।
শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনের গল্প..
আজ থেকে বহু যুগ আগে 1880 সালে পথ চলা শুরু হয় শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনের। হ্যাঁ, ব্রিটিশদের হাত ধরেই যাত্রা শুরু করেছিল স্টেশনটি। এখনও স্টেশনের আশেপাশে বিভিন্ন স্থাপত্যে ছড়িয়ে রয়েছে ব্রিটিশ নিদর্শন। যদিও অবহেলার কারণে বর্তমানে স্টেশনটি জরাজীর্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। জানা যায়, দীর্ঘদিন অবহেলায় থাকায় স্টেশন থেকে চুরি গিয়েছে রেলের একাধিক সামগ্রী।
কিছু বছর আগে পর্যন্ত ডুয়ার্স ও বিহারগামী কয়েকটি স্বল্প দূরত্বের ট্রেন এই স্টেশনে থামলেও বর্তমানে সেই সংখ্যাটা বলা চলে শূন্যের ঘরেই। শিলিগুড়ির বাসিন্দাদের অভিযোগ, একের পর এক ট্রেন বন্ধ করে স্টেশনটিকে কার্যত বাতিল ঘোষণা করার পথে হেঁটেছিল রেল। আর সেই কারণেই বর্তমানে চরম অবহেলায় জরাজীর্ণ অবস্থায় কোনমতে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্টেশনটি। স্টেশনটির ইতিউতি ছড়িয়ে রয়েছে আবর্জনা। যা দেখে শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনের ধারে কাছেও ঘেষতে চান না অনেকেই।
রেলের আশ্বাসে খুশির হাওয়া শিলিগুড়িতে
সম্প্রীতি শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, পরিতক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা শিলিগুড়ি ডাউন স্টেশনটির পুনর্জীবন দাবি করে রেলমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। বিধায়ক বলেন, গত 14 জানুয়ারি রেলমন্ত্রী সঙ্গে দেখা করে শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনকে হেরিটেজ তকমা দেওয়ার আবেদন করেছিলাম।
আরও পড়ুনঃ ভারতীয় রেলে ১০৩৬টি শূন্যপদে বিভিন্ন পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি
তারই উত্তরে সম্প্রতি রেলমন্ত্রী চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে রেলমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট ডিরেক্টরেটকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট তৈরি করার কথা বলেছেন। সেই সাথে শিলিগুড়ি থেকে কলকাতা গামী ট্রেন চেয়ে রেলমন্ত্রীর কাছে আবেদনের ভিত্তিতে সেই ট্রেন চালু করার ব্যাপারেও নাকি স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে এমনটাই দাবি শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্করের।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |