কলকাতাঃ আরজি কর-কাণ্ডে যত সময় এগোচ্ছে ততই একের পর এক রহস্য সামনে উঠে আসছে। বর্তমানে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলা তথা সমগ্র দেশে বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে। বাংলার ‘নির্ভয়া’-কে বিচার পাইয়ে দিতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এদিকে এই ঘটনায় ধৃত সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায় প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি। এটা সেই প্রেসিডেন্সি জেল যেখানে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিকাণ্ডে পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে জ্যোতিপ্ৰিয় মল্লিক বন্দি রয়েছেন। বর্তমানে এই জেলেরই ভিআইপি সেল বা কুঠুরিতে ঠাঁই হয়েছে সঞ্জয়ের। তবে এবার এই জেলে যেতে না যেতেই অতিষ্ট হয়ে উঠল সঞ্জয়।
জেলে ঘুম হচ্ছে না সঞ্জয়ের!
রীতিমতো দু’দণ্ড ঘুমের জন্য হা হুতাশ করছে সঞ্জয়। কারণ সে CBI-র লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদে অস্থির হয়েছে উঠেছে। রাতের পর রাত কেটে গেলেও দু চোখের পাতা এক করতে পারছে না সঞ্জয়। তাঁর দিকে ধেয়ে আসছে একের পর এক প্রশ্ন। পুলিশ থেকে শুরু করে সিবিআইয়ের আশা, জেরায় সে আরও অনেক বড় রহস্য উদঘাটন করতে পারবে। এই সব কিছুর মধ্যে, সিবিআইয়ের তদন্ত ৫৩টি প্রমাণের উপরও নির্ভর করছে যা পুলিশ ইতিমধ্যে অভিযুক্তদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করেছে। সিবিআই সূত্রের খবর, ৫৩টি প্রমাণের মধ্যে ৪০টি প্রমাণ অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। সিবিআই বর্তমানে ফরেনসিক পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে। যে ৪০টি প্রমাণ সিবিআইয়ের তদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে, সেগুলি সাধারণত ঘটনার দিন রাত সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই
ইতিমধ্যে আরজি কর-কাণ্ডের মূলে যেতে স্থানীয়দের পাশাপাশি চিকিৎসকদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অন্তর্বাস ও অভিযুক্তের চপ্পলসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বাজেয়াপ্ত করেছে। সেই রাতে অভিযুক্ত যে পোশাক ও হেলমেট পরেছিল, সেটিও পুলিশ নিয়ে গিয়েছে। এই সমস্ত প্রমাণ ফরেনসিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হচ্ছে। যার রিপোর্ট আগামী কয়েকদিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। সিবিআই সূত্রের খবর, এই মামলার গোটা তদন্ত নির্ভর করছে ঘটনার পর সংগৃহীত সমস্ত তথ্যপ্রমাণের উপর। এসব সাক্ষ্য প্রমাণে অভিযুক্তের আঁচড়ের চিহ্ন থেকে শুরু করে তার আঙুলের ছাপ ও পায়ের ছাপ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত সঞ্জয় রাইয়ের রক্তের নমুনাও নেওয়া হয়েছে যাতে সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্যক্তিদের সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখা যায়।
ঘুমের জন্য ভিক্ষা চাইছে সঞ্জয়!
প্রেসিডেন্সি জেলে রীতিমতো ঘুমের জন্য কাতরাচ্ছে সঞ্জয়। সূত্রের খবর, সঞ্জয় নাকি আদালতের কাছে আর্জি জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থাকে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হোক যাতে তাঁকে কিছুটা সময় ঘুমোনোর সময় দেওয়ার হয়। সঞ্জয়ের বক্তব্য, তাকে নাকি এত বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে যে তাকে ঘুমানোর সময়ও দেওয়া হচ্ছে না। তার অবস্থা এমন হয়েছে যে, ভিআইপি ওয়ার্ডে বন্দি থাকার পরও দু’দণ্ড ঘুমের জন্য কাঁদছে।
পলিগ্রাফ টেস্টে চাঞ্চল্যকর দাবি
ইতিমধ্যে ধৃত সঞ্জয় রাইয়ের পলিগ্রাফ টেস্ট অবধি করেছে সিবিআই। ঘটনার দিন সঞ্জয় রায় যে দুটি যৌনপল্লিতে গিয়েছিল তা সে পলিগ্রাফ টেস্টে স্বীকার করেছিল। সঞ্জয় জানিয়েছে, দুটি যৌনপল্লীতে গেলেও সেখানে কারও সঙ্গে সঙ্গম করেনি সে। বরং নিজের প্রেমিকার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছিল, তার থেকে নগ্ন ছবিও চেয়েছিল। পরে হাসপাতালে আসার সময় এক মহিলাকে রাস্তায় উত্ত্যক্তও করে সঞ্জয়।