প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: একটু একটু করে গড়ে তোলা সঞ্চয় চোখের নিমেষে হারিয়ে ফেলেছিলেন হাজার হাজার মানুষ। রোজভ্যালি চিটফান্ড কাণ্ডে (Rose Valley Chit Fund Case) তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল রাজ্য। এত বড় আর্থিক তছরুপের ঝটকা সহ্য না পেরে অনেকেই আত্মঘাতী হয়েছিল। কেউ টাকা জমাচ্ছিলেন মেয়ের বিয়ের জন্য। কেউ আবার প্রতিদিন ১০ টাকা করে গচ্ছিত রেখেছিলেন রোজভ্যালিতে। কিন্তু স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় সেই রোজভ্যালি চিটফান্ড মামলায় বড় প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। ফরেনসিক অডিট করার দায়িত্ব থেকে এবার হাত গুটিয়ে নিল সেবি।
দায়িত্ব থেকে হাত গুটিয়ে নিল SEBI!
রিপোর্ট অনুযায়ী গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার, হাইকোর্টে রোজভ্যালি সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে রোজভ্যালি চিটফান্ড মামলা ওঠে।এর আগে রোজ ভ্যালি চিটফান্ডের আমানতকারীদের টাকা ফেরাতে হাইকোর্ট বিচারপতি দিলীপ শেঠ কমিটির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে ফরেনসিক অডিট করার দায়িত্ব দিয়েছিল সেবি-কে। কিন্তু এবার সেই দায়িত্ব থেকে হাত গুটিয়ে নিল সেবি। তাই বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ ও বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন এই দায়িত্ব দিতে চাইছে ক্যাগকে। ক্যাগ এই কাজ করতে পারবে কি না, কেন্দ্রকে আগামী সপ্তাহের মধ্যে এই বিষয়ে স্পষ্ট জানাতে হবে কেন্দ্রকে। এদিকে রাজ্যের সংস্থা ওয়েবেলের ধীর গতিতে কাজের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলেন ইডির আইনজীবী।
ওয়েবল অযোগ্য বলে দাবি ইডির
রোজভ্যালির টাকা ফেরানোর ক্ষেত্রে ওয়েববেলের প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে গতকাল হাইকোর্টে ইডির তরফে আপত্তি জানানো হয়। অর্থলগ্নি সংস্থা সাহারার আমানতকারীদের টাকা দ্রুত ফেরানোর বিষয় উন্নত পরিকাঠামো এবং কৃক্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করেছে এই সংস্থা দাবি করেন আইনজীবী। তাদের সমর্থন করে বিচারপতি শেঠ কমিটি। ইডির তরফে দাবি করা হয়, ওয়েবল অযোগ্য। তাই লিখিত আবেদন করা হয়, অন্য কোম্পানিকে সেই কাজে লাগানোর অনুমতি পেতে। তাঁদের মতে ওয়েবেলের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় সংস্থা স্টকহোল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডকে নিযুক্ত করার নির্দেশ দিক আদালত। কিন্তু আপত্তি জানায় রোজভ্যালি কোম্পানির আইনজীবী।
পরিচালনার খরচ বহনের নির্দেশ কেন্দ্রকে
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির জবাবে বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ” ওয়েবেল খুব ভালো কাজ করেছে। তার নথি আছে। আর আপনাদের কমিটির অভিযোগ, ওয়েবেল ভালো কাজ করছে না, তাই তারা বাইরের কোম্পানিকে দিয়ে কাজ করাতে চায়। ওই সংস্থাকে এই কাজ করার টাকা কে দেবে? কমিটি কি করে দেবে? তাদের টাকা নেই।” এছাড়াও বিচারপতি আরও বলেন, “ যদি এডিসি টাকা ফেরতের বিষয় নিযুক্ত রাজ্যের সংস্থা ওয়েবেলের খরচ বহন করে রাজ্য, সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে নিয়োগের ও পরিচালনার খরচ বহন করুক কেন্দ্র। কিন্তু কোনো ভাবেই তাদের জন্য ১০ কোটি টাকাও যদি খরচ হয়, সেটাও আমানতকারীদের অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া যাবে না।”
আরও পড়ুন: ভারী বৃষ্টির জেরে বন্ধ হল দুধিয়া সেতু! থমকে গেল মিরিক-শিলিগুড়ি রুট
পরবর্তী শুনানি কবে?
উল্লেখ্য, আদালতে এদিন ইডির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন করে যে, “এত কথা ইডি যে বলছে, তাঁরা তো মাত্র ৫০০ কোটি টাকা তারা উদ্ধার করেছে। অথচ ১৭৫০০ কোটি টাকা বকেয়া। সেই ১৭ হাজার কোটি কোথায়? এত দিন কি হয়েছে? এডিসি কমিটি বা কি করেছে? আগে ফরেনসিক অডিট হবে, তারপরে সব বক্তব্য শুনব।” সেবিকে নিয়েও একাধিক ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেছেনা বিচারপতি। জানা গিয়েছে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ৭ নভেম্বর। অন্যদিকে অ্যালকেমিস্ট মামলায় সিবিআই, এবং অর্থলগ্নি সংস্থা অ্যালকেমিস্টের মালিকাধীন সংস্থাদের বিষয় রিপোর্ট তলব করল বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ ও বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ। জানা গিয়েছে এই মামলার শুনানি হবে ২০ নভেম্বর।












