প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম মাধ্যম বা লাইফলাইন হিসেবে বরাবর ভারতীয় রেল এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু এই গুরুদায়িত্ব পালনের মাঝেই একের পর এক রেল দুর্ঘটনা সকলের মনে এক তীব্র নেতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলেছে। গত বছরে জুনে ওড়িশার করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা, চলতি বছরে জুলাইয়ে হাওড়া-মুম্বই মেলের দুর্ঘটনা, অক্টোবরে তামিলনাড়ুতে ট্রেন দুর্ঘটনার মতো একের পর এক যে বিপর্যয় দেখে এনেছে জনজীবনে। আর সেই আবহের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার ফের সাতসকালে হাওড়ায় লাইনচ্যুত শালিমার সেকেন্দ্রাবাদ এক্সপ্রেস। আরও একবার প্রশ্নের মুখে রেল।
ফের রেল দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতে হল যাত্রীদের!
দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের তরফে জানা গিয়েছে, প্রতি শুক্রবার সেকেন্দ্রাবাদ স্টেশন থেকে শালিমার সেকেন্দ্রাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়ে। সেই মতো গতকালও ট্রেনটি শালিমারের উদ্দেশে রওনা দেয়। আজ সকাল ৬টা বেজে ৭ মিনিটে শালিমার স্টেশনে পৌঁছনোর কথা ছিল। কিন্তু শালিমারে ঢোকার কিছুটা আগে নলপুর স্টেশনের কাছে ঘটে ভয়ংকর বিপদ। ২২৮৫০ ডাউন সেকেন্দ্রাবাদ-শালিমার সাপ্তাহিক সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের তিনটি কোচ লাইনচ্যুত হয়ে যায় নিমেষে। এই দুর্ঘটনায় যে সকল কামরাগুলি লাইনচ্যুত হয়েছে, তার মধ্যে একটি পার্সেল ভ্যান ছিল। এবং বাকি দুটি কামরায় ট্রেন যাত্রীরা ছিলেন। তবে এখনও পর্যন্ত পাওয়া শেষ সেই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত বড় কোনও চোট-আঘাতের খবর এবং হতাহত সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা মেলেনি।
তীব্র আতঙ্ক যাত্রীদের মনে
দুর্ঘটনাটি যেই এলাকায় হয়েছে, সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভোর ৫ টা ৩০ মিনিট নাগাদ তাঁরা হঠাৎ করেই এক বিকট শব্দ শুনতে পান। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা দুর্ঘটনাস্থলে এসে দেখতে পান যে ট্রেনের তিনটি কামরা লাইনচ্যুত হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে ট্রেনের ভিতরে থাকা যাত্রীরা জানিয়েছেন যে ভোরের দিকে আচমকা প্রবল ঝাঁকুনি দেয় ট্রেন। তবে সৌভাগ্যবশত ট্রেনের গতি বেশি না থাকায় বড়সড় কোনও বিপদ হয়নি। আতঙ্ক তৈরি হয়েছে যাত্রীদের মনে। তাই দুর্ঘটনার পর যাত্রীদের মধ্যে অনেককেই ট্রেন থেকে নেমে লাইন ধরে হাঁটতে দেখা গিয়েছে। জারি করা হয়েছে হেল্পডেস্ক নম্বর। ১) খড়্গপুর: ৬৩৭৬৪ ২) ০৩২২২৯-৩৭৬৪
অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে সাঁতরাগাছি থেকে খড়্গপুর থেকে দুর্ঘটনাস্থলে ‘অ্যাক্সিডেন্ট রিলিফ ট্রেন’ এবং ‘মেডিক্যাল রিলিফ ট্রেন’ পৌঁছে গিয়েছে। সঙ্গে যাত্রীদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ১০টি বাসের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। আপাতত লাইন মেরামতি করে পরিষেবা স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ
ঘটনার জেরে এইমুহুর্তে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে হাওড়ার দক্ষিণ পূর্ব শাখায়। জোরকদমে তদন্ত শুরু করেছে দক্ষিণ পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। তবে দুর্ঘটনার আসল কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে যে, এক নম্বর লাইন দিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও, ট্রেনটি দুই নম্বর লাইনে চলে এসেছে। এর ফলেই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এই ঘটনায় ফের রেলের পরিকাঠামো এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হল রেলের বিরুদ্ধে।