প্রীতি পোদ্দার, কোচবিহার: হাতে বাকি আর মাত্র কয়েকটা মাস, তারপরেই রাজ্য জুড়ে শুরু হতে চলেছে বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু তার আগেই কোচবিহারের (Cooch Behar) পুলিশ সুপারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল দ্যুতিমান ভট্টাচার্যকে। কালীপুজোর রাতে শব্দবাজি থামাতে লাঠিপেটার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। আর সেই কারণেই নবান্ন থেকে চরম পদক্ষেপ নেওয়া হল। দ্যুতিমানকে সরানো নিয়ে মহা শোরগোল রাজ্যের অন্দরে।
দীপাবলির রাতে বাজি ফাটানো নিয়ে বচসা
রিপোর্ট অনুযায়ী, গত সোমবার, দীপাবলির রাতে বাজি ফাটানোর ‘অপরাধে’ শিশু, মহিলা-সহ বেশ কয়েক জনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল কোচবিহারের পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ‘হাফ প্যান্ট এবং স্যান্ডো গেঞ্জি পরে, মাথায় ফেট্টি বেঁধে’ দীপাবলির রাতে বাংলো থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি। ‘ডান্ডা হাতে’ মহিলা, শিশু এবং এক স্কুলশিক্ষককে মারধর করেন। দ্যুতিমান নিজে অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। তিনি দাবি করেন, গভীর রাত পর্যন্ত শব্দবাজি ফেটেছে। তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দিয়েছেন মাত্র। আর তাই নিয়ে শোরগোল শুরু হয়ে যায়। এমতাবস্থায় নবান্নের তরফে দ্যুতিমানকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হল।
নবান্নের তরফে জারি করা হল বিজ্ঞপ্তি
গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার, একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে নবান্ন। যেখানে স্পষ্ট জানানো হয়েছে যে, আসানসোল দুর্গাপুর কমিশনারেটের ডিসি সন্দীপ কাররাকে এবার কোচবিহারের পুলিশ সুপার হিসেবে আনা হয়েছে। এবং আসানসোল দুর্গাপুর কমিশনারেটের ডিসি পদে পাঠানো হয়েছে সোনওয়ানে কুলদীপ সুরেশকে। যিনি কিনা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট পদে ছিলেন। এবং কোচবিহারের এসপি-কে বদলি করা হল রাজ্য সশস্ত্র বাহিনীতে। তিনি আপাতত থার্ড ব্যাটেলিয়নের কমান্ডো বাহিনীর অফিসারের পদ সামলাবেন। কিন্তু কেন দ্যুতিমান ভট্টাচার্যকে সরানো হল, সে নিয়ে নবান্নের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। শুধুমাত্র ‘রুটিন বদলির’ অজুহাত দেখিযয়েছে প্রশাসন। তবে অনেকেরই ধারণা, সম্প্রতি যে মারধরের ঘটনা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, তার জেরেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘আমি বিশ্বাস করি কালী মূর্তি একজন মুসলমান ভেঙেছে!’ কাকদ্বীপ কাণ্ডে মুখ খুললেন দেবাংশু
বিক্ষোভের ঘটনায় গ্রেফতার অনেকেই
এদিকে দ্যুতিমানের বিরুদ্ধে পর দিন স্থানীয় বাসিন্দারা পথ অবরোধও করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়েছিল। ইতিমধ্যেই বিক্ষোভের ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাঁদের মধ্যে তিন জনকে জামিনে মুক্তি দেয় আদালত। পাঁচ জনকে পুলিশি হেফাজত এবং দু’জনকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়। ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, খুনের উদ্দেশে পুলিশকে মারধর, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি, অবৈধ জমায়েতের অভিযোগে যথাযথ ধারায় এফআইআর রুজু করা হয়েছে। অন্যদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সমাজমাধ্যমে কোচবিহারের এসপি-র আচরণের নিন্দা করে লেখেন যে, ‘‘অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় মহিলা এবং শিশুদের মারধর করেছেন পুলিশ সুপার।’’












