প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: এপ্রিলের গোড়ায় সুপ্রিম কোর্ট এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার (SSC Case) রায়ে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের চাকরি বাতিল করে দেয়। সেই সঙ্গে নতুন নিয়োগের জন্য রাজ্যকে তিন মাস সময় দিয়েছিল। পরে সেই নিয়োগের সময়সীমা বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এবার সেই নির্দেশ অনুযায়ী চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি অযোগ্যদের জন্যেও চাকরিক্ষেত্রে খুলে দিলেন একাধিক রাস্তা।
ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা
চাকরিহারাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে কয়েক দিন আগে চাকরিহারা গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মীদের ভাতা দেওয়ার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, আপাতত গ্রুপ সি কর্মীদের রাজ্য সরকার প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের মাসে ২০ হাজার টাকা করে দেবে। কিন্তু সেই ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি চাকরিহারাদের একাংশ। তাই সেই কারণে চাকরিহারা এসএসসি-র গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। আর এই আবহেই এবার উঠে এল অযোগ্যদের চাকরির প্রসঙ্গ।
অযোগ্যদের জন্য চাকরির ভাবনা সরকারের
২০১৬ সালে SSC নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যাঁদের OMR শিটে কারচুপির অভিযোগ উঠেছে, অর্থাৎ যাঁদেরকে অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাঁরা নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এমনকি এও বলা হয়েছিল যে এই চিহ্নিত অযোগ্যরা আর কোনো বেতন পাবেন না। কিন্তু গতকাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে চিহ্নিত অযোগ্যদের উদ্দেশে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন যে যাদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে তাঁরা চাইলে শিক্ষা দফতরেও যোগ দিতে পারেন। আর এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হল আরও এক সমালোচনা।
সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে, “যাঁরা বাতিল হয়ে গেছেন…তাদের বলা হয়েছে, তোমরা এই পরীক্ষায় বসতে পারবে না। কিন্তু অন্য দফতরে যোগ দিতে পারবেন। তাছাড়াও অযোগ্যদের তালিকায় এমন অনেক শিক্ষক আছে, ওরা চাইলে শিক্ষা দফতরেও যোগ দিতে পারে। তাছাড়া আমরা আরও তিন-চারটে দফতরের অপশন দেব। কিন্তু, সেটা আমরা আলাদা করে নোটিফাই করব।” অর্থাৎ রাজ্য সরকার যে অযোগ্যদের কথা মাথায় রেখেছেন এই মন্তব্যে তা একেবারেই স্পষ্ট। শুধু তাই নয় তাদের সামনে চাকরির বেশ কিছু রাস্তাও খুলে দিয়েছেন।
চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদেরও চাকরি!
অন্যদিকে চাকরিহারা গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের নিয়েও বিকল্প ভাবনার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা অতিরিক্ত গ্রুপ সি, ডি নিচ্ছি সঙ্গে সঙ্গে যাঁরা শিক্ষা বিভাগে কাজ করতেন অথচ তাঁদের সবারটা বাতিল হয়ে গেছে, তাঁরা শিক্ষা বিভাগে আবেদন করতে পারবেন। ‘
আরও পড়ুন: স্বস্তি করদাতাদের! আয়কর রিটার্ন জমার সময়সীমা বাড়াল সরকার, জেনে নিন নতুন তারিখ
পিটিশন নিয়ে মমতা-বিকাশ বিবাদ
অন্যদিকে সাংবাদিক বৈঠকে উঠে এল রিভিউ পিটিশনের প্রসঙ্গ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন জানান, “সকলেই এতদিন অপেক্ষা করছিল রিভিউ পিটিশনের জন্য। সেটা হলে চাকরি থাকবে সকলের, অন্যথায় অন্য উপায়ও বের করছে রাজ্য।” তবে এই প্রসঙ্গে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য “সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে ৩১মে-র মধ্যে নতুন নিয়োগ চালু হলে, সেখানে রিভিউয়ের প্রশ্ন থাকে নাকি?”
এছাড়াও এদিন বিকাশ বাবু আরও জানিয়েছেন যে, “যাঁদের চাকরি চলে গিয়েছে, আদালত বলেছে, পরীক্ষায় বসতে পারবেন না, তাঁদের তিনি আবার বেআইনি ভাবে অন্যত্র চাকরি দেওয়াবেন? উনি জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।”
রাজ্য রাজনীতি, বিনোদন থেকে শুরু করে খেলা সংক্রান্ত নানা ধরনের খবরের লেটেস্ট আপডেট পেতে এখনই ফলো করুন আমাদের India Hood Bangla কে।