প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: দিন যত এগোচ্ছে রাজ্যে বিদ্যুৎ এর চাহিদা যেন লাফিয়ে লাফিয়ে আরও বাড়ছে। তার সঙ্গে চাপও বাড়ছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার। অনেক গ্রাহক ঠিক সময়ে বিদ্যুৎ বিল না মেটানোতে বেজায় সমস্যায় পড়ছে সংস্থা। তবে এই কাণ্ড শুধু গ্রাহকরাই করছে তা কিন্তু নয়, নানা সরকারি দফতরও বকেয়া বিল ঝুলিয়ে রেখেছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা অর্থাৎ WBSEDCL এর তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে এখনও পর্যন্ত নানা সরকারি দফতরের ১০০০ কোটি টাকারও বেশি বিল বকেয়া রয়েছে। আর সেই বকেয়া আদায়ের ক্ষেত্রে এবার কড়া পদক্ষেপ নিল রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন পর্ষদ। তাতে সায় থাকছে নবান্নও। আশা করা যাচ্ছে এবার এই পদক্ষেপের মাধ্যমেই হয়তো কিছুটা বকেয়া অগ্রিম মেটানো যাবে।
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার নয়া পদক্ষেপ
জানা গিয়েছে, রাজ্যের সরকারি দফতর এবং কার্যালয়গুলোতে এখন থেকে পোস্ট পেইড সিস্টেম থাকবে না। চালু করা হবে প্রি-পেইড সিস্টেম। সহজ ভাষায় বলা যায় ‘ আগে টাকা পড়ে বিদ্যুৎ বণ্টন’ এই পদ্ধতিতেই চলতে চাইছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা অর্থাৎ WBSEDCL। সম্প্রতি অর্থ দফতর একটি নির্দেশনার মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে এখন থেকে সব সরকারি দফতরে প্রি-পেইড মিটার বসাতে হবে। কিছুদিন পরেই, বিভিন্ন ছোট সরকারি অফিসে এবার প্রি-পেড মিটার লাগানোর কাজ শুরু হবে।
বিদ্যুৎ রিচার্জ এখন ফোনের মতই
যার ফলে অফিস কর্তৃপক্ষকে নিয়ম মেনে আগে আগেই মোবাইল রিচার্জের মতো বিদ্যুতের মিটার ‘রিচার্জ’ করাতে হবে। অর্থাৎ, আগাম দিয়ে রাখতে হবে বিদ্যুৎ খরচের টাকা। যদি জমা রাখা টাকা শেষ হয়ে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই অটোমেটিক বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তবে নির্দেশে এ-ও স্পষ্ট করা হয়েছে যে, কোনও অফিস রিচার্জের জন্য নেওয়া টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া টাকা মেটাতে পারবে না। বিদ্যুতের অপব্যবহার বন্ধ করা এবং বিল না মেটানোর প্রবণতা রোধ করতে স্মার্ট মিটার এবং প্রি-পেড সংযোগ চালুর উদ্যোগ তাই নেওয়া হয়েছে।
বকেয়ার উপর মিলবে ৪ শতাংশ ছাড়
তবে এই উদ্যোগ এই প্রথম নয়। ২০২৩ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মেনে মধ্যেই প্রথম পর্যায়ের ‘স্মার্ট মিটার’ চালুর কাজ শেষ করার কথা ছিল সকল রাজ্যে। কিন্তু সরকারি অফিসে এমন মিটার বসানো নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্যান্য রাজ্যগুলি বিরোধিতা তৈরি করেছিল। যার ফলে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা বাধ্য হয়েই রাজ্যের বিদ্যুৎ রেগুলেটরি কমিশনের কাছে আবেদন রাখে যে যদি কোনও সরকারি অফিস ‘পোস্ট-পেড’ থেকে ‘প্রি-পেড’ পদ্ধতিতে আসতে চায় তবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে পরের দশ দিনের মধ্যে বকেয়া মিটিয়ে ফেলতে হবে। তাতে বকেয়ার উপরে ৪ শতাংশ ছাড়় পাওয়া যাবে। শেষে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই প্রস্তাব কার্যকরের পক্ষেই রায় দেয় বিদ্যুৎ রেগুলেটরি কমিশন।
তবে এই উদ্যোগ শুধুমাত্র সরকারি অফিসেই হবে তা নয়, ধাপে ধাপে শিল্প এবং বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রেও প্রি-পেড পদ্ধতি চালু করতে চায় বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। সেই সঙ্গে বড় শহরগুলি দিয়ে শুরু হবে সাধারণ গ্রাহকদের মিটার-বদল প্রক্রিয়া। প্রথম ধাপে ৫ থেকে ৫০ কেভি বিদ্যুৎ খরচ হয় এমন মিটারগুলিকে টার্গেট করা হবে। এর পরে পুরসভা এবং পঞ্চায়েতগুলিতেও প্রি-পেড মিটার বসানোর লক্ষ্য রয়েছে।