প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: খবরের শিরোনামে এই মুহূর্তে এসএসকেএম ও উলুবেরিয়া মেডিকেল কলেজের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশ্ন উঠছে রাজ্যের প্রশাসনের দিকে। এইভাবে দিনের পর দিন বিশৃঙ্খলাময় খবর নিয়ে ক্ষুব্ধ সকলেই। তাই এবার রোগী ও চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই নড়ে চড়ে বসলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাঁরই নির্দেশে আজ নবান্নে ডাকা হয় এক জরুরি বৈঠক। তার সঙ্গে নেওয়া হয় একাধিক সিদ্ধান্ত।
হাসপাতাল নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর নির্দেশ
উল্লেখ্য, ১ অক্টোবর থেকে চিকিৎসকদের হাজিরা নিয়ে নতুন নিয়ম চালু করেছিল জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন। এবার থেকে আর বায়োমেট্রিক হাজিরা দিলে চলবে না চিকিৎসকদের। নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে আধার নির্ভর হাজিরা দিতে হবে তাঁদের। এই অ্যাপ মুখের উপর ভিত্তি করেই চিকিৎসকদের হাজিরা নেবে। আসলে সরকারি হাসপাতালগুলিতে কিছু চিকিৎসকের উপস্থিতি নিয়ে বার বার অভিযোগ করা হয়। কয়েকজন চিকিৎসক আবার সরকারি হাসপাতালে রোগী না দেখে বেসরকারি চেম্বারে চিকিৎসা করেন। তাই চিকিৎসক এবং কর্মীদের সুবিধার কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায় বাংলাতেও হাসপাতাল নিরাপত্তা জোরদার ও কঠোর নির্দেশ জারি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৈঠকে কী বললেন মমতা
রিপোর্ট অনুযায়ী, আজ অর্থাৎ শনিবার নবান্নে হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে ডাকা হয় জরুরি বৈঠক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই বৈঠকের আয়োজন করেন মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রিন্সিপাল ও সুপাররা, প্রতিটি জেলার জেলাশাসক, পুলিশ কমিশনার এবং জেলা পুলিশ সুপাররা। পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজেও সেই বৈঠকে যোগ দেন। ওই ভিডিয়ো বৈঠকে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, সুপার, জেলাশাসক, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক যেন কোনও ভাবেই রোগী ও চিকিৎসকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় কোনও রকমের আপস না করে। পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের কাজে যোগ দেওয়ার আগে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক।
আরও পড়ুন: ‘আমরা তৃণমূল করি, শুধু আমার ছেলেকেই ধরেছে!’ বিস্ফোরক নারায়ণ হালদারের বাবা ভূপতি
এছাড়াও বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, নিরাপত্তা রক্ষীদের নির্দিষ্ট পোশাক দেওয়া হবে সঙ্গে থাকবে সঠিক পরিচয়পত্র। প্রতিদিন নিরাপত্তারক্ষীদের রোল কল ও ব্রিফিং সেশন করতে হবে। প্রত্যেক হাসপাতালকে ডিউটি রোস্টার যাচাই করে নিশ্চিত করতে হবে, কর্মীরা নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করছেন। হাসপাতাল চত্বরে বা নির্দিষ্ট এলাকায় অনুমতি ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। এছাড়াও হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরের সিসিটিভি নজরদারি ও পর্যাপ্ত আলো আছে কি না তা প্রতিদিন খতিয়ে দেখতে হবে। আধিকারিকদেরও নিয়মিত পরিদর্শন জারি রাখতে হবে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের সমন্বয় বৈঠকে জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ “হাসপাতালে রোগী ও চিকিৎসক, উভয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনও গাফিলতি সহ্য করা হবে না।” এছাড়াও নবান্ন থেকে জানানো হয়েছে যে, হাসপাতালগুলির দমকলের লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা যাচাই করতে হবে নিয়মিত। প্রয়োজনে হাসপাতালে হাসপাতালে গিয়ে দমকল ব্যবস্থা পরীক্ষা করতে হবে। এছাড়াও প্রতিটি জেলায় পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতরের যৌথ সমন্বয় বৈঠক করতে হবে, যাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোনও ফাঁক না থাকে।












