প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: রাজ্যে একের পর এক আর্থিক বোঝা যেন বেড়েই চলেছে। তার উপর দুর্নীতির খাঁড়া। একদিকে আর্থিক বোঝা কমাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। অন্যদিকে রেশন থেকে শুরু করে নিয়োগ পদ্ধতি সবেতে দাপুটে শাসকদলের নেতাদের নাম জড়িয়েছে। আর এই আবহে সঞ্জীব খান্না নতুন প্রধান বিচারপতি পদে বসেই রাজ্যের বিরুদ্ধে বড়সড় রায় দিল সুপ্রিম কোর্টে।
ঘটনাটি কী?
সূত্রের খবর, হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস বা HPL ছিল রাজ্য সরকার এবং TCG তথা পূর্ণেন্দুর চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর যৌথ প্রকল্প। কিন্তু সেই প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই সংস্থার মধ্যে দীর্ঘ তর্কবিতর্ক দানা বাঁধে। তখন HPL এর পুনরুজ্জীবনের শর্ত হিসেবে ঠিক হয়। একটি হল TCG-কে দফায় দফায় মোট ৩২৮৫.৪৭ কোটি টাকা দেবে রাজ্য, অথবা আরও একটি শর্ত হল ১৯ বছর ধরে আর্থিক সহায়তা দেবে রাজ্য। দুটোর মধ্যে যেটা আগে হবে, সেটাই দেবে রাজ্য সরকার। অর্থাৎ, দফায় দফায় মোট ৩২৮৫.৪৭ কোটি টাকা ১৯ বছরের আগেই দেওয়া হয়ে গেলে আর তত দিন ধরে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে না।
এদিকে যেই সময় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয় সেই সময় চালু ভ্যাটের নিরিখে ওই আর্থিক সুবিধার হিসাব তদারকি করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অঙ্কটা দাঁড়িয়েছিল ৩১৭.১৩ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে GST চালুর পর থেকেই TCG-কে আর টাকা দেয়নি রাজ্য। আর ভিত্তিতে TCG-র অধীন HPL প্রোমোটার সংস্থা এসেক্সের দাবি, নতুন কর ব্যবস্থার সঙ্গে ওই সুবিধার কোনো যোগ সূত্র নেই। চুক্তি অনুসারেই তা তাদের প্রাপ্য। তাই এই অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছর সুপ্রিম কোর্টের তিন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে নিয়ে তৈরি বেঞ্চ সালিশি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজ্যকে ওই পরিমাণ বকেয়া অর্থ মেটানোর নির্দেশ দিয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্টে বড় ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার
কিন্তু রাজ্য এই সিদ্ধান্তে নারাজ। তাই তো সেই সিদ্ধান্তকে পুনরায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার। গতকাল ছিল সেই শুনানির রায়দানের দিন। গতকাল অর্থাৎ সোমবার, এই মামলায় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, অবিলম্বে দু’হাজার কোটি টাকা কলকাতা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দিতে রাজ্য সরকারকে। প্রধান বিচারপতি হিসাবে সঞ্জীব খান্না দায়িত্ব নেওয়ার পরে রাজ্য সংক্রান্ত এটি ছিল প্রথম মামলা। আর এই প্রথম মামলাতেই বড় ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই রায়ের ফলে রাজ্যের ঘাড়ে আরও বেশ কিছুটা আর্থিক বোঝা চাপল।