২০১৬ সালের এসএসসির সমগ্র প্যানেল বাতিল হয়ে গিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে। চাকরি গিয়েছে এক ধাক্কায় প্রায় ২৬,০০০ হাজার শিক্ষক থেকে শুরু করে শিক্ষা কর্মীর। এদিকে এই ঘটনার পর যারা চাকরি পাননি তাঁদের সঙ্গে মিলে রাস্তায় বিক্ষোভে সামিল হয়েছে চাকরিহারারা। অর্থাৎ রাস্তায় নেমে চাকরির দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন কয়েক হাজার শিক্ষক, শিক্ষিকা থেকে শুরু করে শিক্ষা কর্মীরা। এদিকে প্রশ্ন উঠছে, বাকি প্যানেলে চাকরিগুলি আদৌ কি বৈধ? সর্বোপরি আগে হওয়া একের পর এক টেট পরীক্ষা কি বৈধ?
এই প্রশ্ন তুলেছে খোদ কলকাতা হাইকোর্টও। ইতিমধ্যে ২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেলে যারা চাকরি হারিয়েছেন তাঁদের মধ্যে কারা যোগ্য এবং অযোগ্য প্রার্থী তাঁদের একটি তালিকা ইতিমধ্যে চেয়ে পাঠিয়েছে হাইকোর্ট থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট। আগে এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার জানিয়েছিলেন যে যোগ্য অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা কিভাবে দেওয়া সম্ভব? যদিও নিজের মন্তব্য থেকে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে এসএসসির চেয়ারম্যান জানান, ‘চাকরিহারাদের মধ্যে থেকে যোগ্য-অযোগ্য চিহ্নিত করা সম্ভব’। যদিও এসবের মাঝে কলকাতা হাইকোর্টের প্রশ্ন, ২০১৪-র টেট কি বৈধ?
এদিকে হাইকোর্টের এহেন প্রশ্নে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন সকলে। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাস বসেছিল শুক্রবার। সেখানে ২০১৬ সালের টেট নিয়োগ নিয়েও ওঠে একের পর এক প্রশ্ন। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সিবিআইয়ের রিপোর্টে ওই পরীক্ষা নিয়ে অনেক অনিয়মের কথা উঠে এসেছে। নাকি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ টেট-এ পাশ করা এবং ফেল করা প্রার্থীদের আলাদা করতে পারছে না। বিচারপতির প্রশ্ন, তাহলে এই ২০১৬ সালের টেট কী আদৌ বৈধ? এদিকে বিচারপতির এহেন পর্যবেক্ষণের জেরে অনেকের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে বলে মনে হচ্ছে।
সবথেকে বড় কথা, বিচারপতি মান্থা ইতিমধ্যে জানতে চেয়েছেন, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কি কখনও আদালতে পাশ এবং ফেল করা প্রার্থীদের তালিকা জমা দিয়েছে? সেই তালিকা জমা দেওয়া সম্ভব? বিচারপতির আরও পর্যবেক্ষণ, টেট-এর ফলাফল সংক্রান্ত ভুয়ো ওয়েবসাইটে যাঁদের নাম ছিল এবং যাঁরা ভুয়ো ই-মেলের ভিত্তিতে চাকরির জন্য টাকা দিয়েছেন তাঁদের কি অযোগ্য বলে গণ্য করা যেতে পারে? এদিকে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের অন্যতম আইনজীবী বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায় জানান “কারা টেট পাশ করেছিলেন এবং কারা টেট পাশ করেননি, তা পর্ষদ বলতে পারছে না। তার ফলে এখনও পৃথক করে দেখা সম্ভব নয়। তবে যাঁদের কাছে উত্তরপত্রের প্রতিলিপি আছে তাঁদের পাশ-ফেল নিয়ে সন্দেহ থাকার কথা নয়।”
কয়েকদিন আগেই সিবিআই কলকাতা হাইকোর্টে জানায়, ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেট পরীক্ষাতেও বেনিয়মের ইঙ্গিত রয়েছে। সিবিআইএ-র তদন্তে উঠে এসেছে, নকল ওয়েবসাইট তৈরি করে বাইরের লোক নিয়োগ থেকে শুরু করে, ফেল করাদের পাস হিসেবে দেখিয়ে নিয়োগ সহ আরও অনেক কিছু করা হয়েছে। রাজাশেখর মান্থারের বেঞ্চ সিবিআইকে ওএমআর শিটের প্রকৃত তথ্য খুঁজে বের করতে নির্দেশ দিয়েছে।