প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: দেশের উন্নয়নের স্বার্থে একের পর এক বড় পদক্ষেপ এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কীভাবে দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো আরও ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়া যায় তাই নিয়ে যত কদমে চলছে প্রস্তুতি। কয়েক বছর আগে কেন্দ্রীয় সরকার আর্থিক বৃদ্ধিতে জ্বালানি জোগাতে পরিকাঠামো ক্ষেত্রের উন্নয়নকে জোর দেওয়ার বার্তা দিয়েছিল দেশগুলিকে। বিশেষ করে পরিকাঠামোয় লগ্নি হলে যেহেতু প্রচুর মানুষ কাজও পান সেই নিরিখেই এই সিদ্ধান্ত। তবে সেটি বাস্তবে ঠিক কতটা প্রভাব ফেলছে না কোন রাজ্য কতটা এই কাজে এগোচ্ছে তাই নিয়ে প্রকাশ্যে এল স্টেট ব্যাঙ্কের একটি গবেষণাপত্র। যা দেখে মাথায় হাত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের (Infrastructure Development in WB)।
পরিকাঠামো উন্নয়নে খরচ কত পশ্চিমবঙ্গে?
স্টেট ব্যাঙ্কের গবেষণাপত্রটি মূলত চলতি অর্থবর্ষের তিনটি ত্রৈমাসিক অর্থাৎ এপ্রিল-ডিসেম্বর মাসের তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে। সেই রিপোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সময়ে গত অর্থবর্ষ অর্থাৎ ২০২৩-২৪ এর এপ্রিল-ডিসেম্বেরর তুলনায় দেশে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে উন্নতির গতি অনেকটাই কমে গিয়েছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, অন্ধ্রপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ড— এই দুই রাজ্য সহ পশ্চিমবঙ্গে মূলধনী খাতে কিংবা পরিকাঠামো উন্নয়নে খরচ হিসেবে অনেকটাই কমেছে, সংশ্লিষ্ট অর্থবর্ষের বাজেট বরাদ্দের ১০ শতাংশের বেশি হারে। তালিকাটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে জানা যাবে স্টেট ব্যাঙ্কের সমীক্ষা অনুযায়ী, গত ৯ মাসে পশ্চিমবঙ্গ ব্যয় বাজেট বরাদ্দের মাত্র ৩৪% খরচ করেছে যেখানে আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ৪৫%।
বাকি রাজ্যের উন্নয়ন খরচের হিসাব
অন্যদিকে স্টেট ব্যাঙ্কের সমীক্ষা অনুযায়ী ঝাড়খণ্ডে এখনও পর্যন্ত বরাদ্দের মাত্র ১৭% খরচ করা গিয়েছে। যা গত বার ছিল ৪৮%। এদিকে অন্ধ্রপ্রদেশে বাজেট বরাদ্দের ২৭% খরচ করেছে তারা। তবে বাকি রাজ্যের অবস্থা খুবই ভালো। গত অর্থবর্ষের থেকে পরিকাঠামো নির্মাণে খরচ-খরচা বরাদ্দের তুলনায় বেড়েছে পাঁচ রাজ্যে। যার মধ্যে সকলের উপরে রয়েছে পাঞ্জাব, বাজেট বরাদ্দের খরচ হয়েছে যেখানে ৫৭%। কর্নাটকে ৪৬% খরচ হয়েছে এবং উত্তরাখণ্ডে ব্যয় হয়েছে বরাদ্দের ৪০%। পাশাপাশি কেরল ও রাজস্থানে ২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪২ শতাংশ। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের এই পরিস্থিতি নিয়ে রীতিমত বিরোধীদের কটাক্ষের মুখে পড়তে হচ্ছে শাসকদলকে।
আরও পড়ুনঃ তৃণমূলের পার্টি অফিসে বিজেপি নেত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ! চাঞ্চল্য পশ্চিম মেদিনীপুরে
যদিও রাজ্য প্রশাসনের এক প্রাক্তন শীর্ষকর্তার মতে, এই তথ্য আদেও সঠিক কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তাই সমগ্র অর্থবর্ষের তথ্য দেখে নেওয়া উচিত। তবে বাংলা-সহ একাধিক রাজ্য যে এই ক্ষেত্রে ধীর গতিতে চলছে, তা মেনে নিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদ অজিতাভ রায়চৌধুরী বলেন, “ সরকারের রাজস্ব আদায়ের গতিও ঢিমে। যে কারণে পরিকাঠামো উন্নয়নে হাতেগোনা কয়েকটি রাজ্য ছাড়া বাকি সকলের অগ্রগতি খুব একটা ভালো নয়।’’ পাশপাশি বণিকসভা মার্চেন্টস চেম্বারের অর্থনীতি ও ব্যাঙ্কিং বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান স্মরজিৎ মিত্র আর্থিক বৃদ্ধির হারকেই এই ঢিলেমির অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন।