সহেলি মিত্র, কলকাতাঃ এবার স্কুলে ঘুরে বেরাতে দেখা গেল ‘সানন্দা’-কে। আর এই সানন্দাকে তো দেখে রীতিমতো অবাক সকল পড়ুয়া। সে সেই চিরাচরিত নোটিশ খাতা নিয়ে আসছে, শিক্ষকদের থেকে সই নিয়ে আবার ফিরেও যাচ্ছে। এখন আপনিও নিশ্চয়ই ভাবছেন কে এই ‘সানন্দা’? তাহলে জানিয়ে রাখি, বাংলার এক স্কুলে এল ‘সানন্দা’ নামের একটি রোবট। সে সব কাজ করে দিচ্ছে।
স্কুলের কাজ করছে ‘রোবট’
স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, নদিয়ার কল্যাণীতে অবস্থিত পান্নালাল ইনস্টিটিউশন গ্রুপ-ডি কর্মীর ঘাটতি পূরণের জন্য একটি মানবিক রোবট, ‘সানন্দা’ (Sananda Robot) চালু করেছে। কল্যাণীর এই স্কুলে প্রায় ১,৬০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। এদিকে বর্তমানে অনুমোদিত পাঁচজনের বদলে মাত্র দুজন গ্রুপ-ডি কর্মী রয়েছে। সংখ্যা শুনে বোঝাই যাচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষকে পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে যথেষ্ট হিমশিম খেতে হয়। সহকারী প্রধান শিক্ষক সৌদিপ্ত দাস বলেন। “যখনই একজন ছুটিতে যেতেন, তখন পুরো ব্যবস্থাটি স্লো হয়ে যেত। সেই সংকট থেকেই রোবট আনার ধারণাটি এসেছে।” এদিকে প্রধান শিক্ষক রমেন চন্দ্র ভাওয়াল বলেন যে মানুষের মতো, রোবটের ছুটি বা বিশ্রামের প্রয়োজন হয় না, যার ফলে এটি ব্যয়বহুল হলেও সময় অনেকটাই বাঁচে আবার কাজও হয়ে যায়।
রোবটটি তৈরি হয়েছে হায়দ্রাবাদে
হায়দ্রাবাদ-ভিত্তিক একটি কোম্পানি দ্বারা প্রায় ২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত, ‘সানন্দা’ ৮-১০ কেজি ওজন বহন করতে পারে। এটি ফাইল, নোটবুক এবং জল সরবরাহ করে এবং ভয়েস বা স্পর্শের মাধ্যমে সক্রিয় করা যেতে পারে। এটি আঞ্চলিক, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাষায় যোগাযোগ করে। রোবটটি আঞ্চলিক এবং ইংরেজি উভয় ভাষায় সতর্কতা জারি করে। একবার চার্জ দিলে এটি প্রায় ১২ ঘন্টা ধরে কাজ করে।
এই উদ্যোগটি দুবাই-ভিত্তিক একজন প্রাক্তন ছাত্র এবং আইআইটি খড়গপুর এবং আইআইএম আহমেদাবাদের প্রাক্তন ছাত্র সন্দীপ মুখার্জির ৪৬.৫ লক্ষ টাকার অনুদানের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে তার অবদানের ফলে দুটি শ্রেণীকক্ষ, একটি ৫৮.৫ কেভিএ জেনারেটর, একটি ৭৫ ইঞ্চি স্মার্ট টিভি এবং রোবট যুক্ত হয়েছে। শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা রোবটটি নিয়ে উচ্ছ্বসিত। নবম শ্রেণীর এক পড়ুয়া বলে, “আমি কখনও কল্পনাও করিনি যে আমাদের স্কুলে একটি রোবট কাজ করবে। এটি বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর মতো মনে হয়।” অন্যদিকে শিক্ষকরা আশা করেন যে এটি দৈনন্দিন স্কুল জীবনে প্রযুক্তির উদ্ভাবনী প্রয়োগকে অনুপ্রাণিত করবে।