প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: সকাল হতেই পাঠশালা থেকে নামতা মুখস্তের আওয়াজ। আটের ঘরের নামতা মুখস্থ বলছে ক্লাস টু’র এক সাঁওতালি পড়ুয়া। পুরুলিয়ার (Purulia) বাঘমুন্ডি ব্লকের অযোধ্যা পাহাড়চূড়োর গ্রাম জিলিংসেরেঙ-এ এভাবেই চলছে মালতির বিনা পয়সার স্কুল। যেখানে সাঁওতালি, বাংলা মাধ্যমের স্কুলের একমাত্র শিক্ষক আদিবাসী বধূ মালতি মুর্মু। আর তাঁর হাত ধরেই শিক্ষার আলো জ্বলছে পাহাড়চূড়ার ওই পিছিয়ে পড়া গ্রামে।
নিজের উদ্যোগেই শুরু করেন এই স্কুল
উচ্চমাধ্যমিক পাস গৃহবধূ মালতি মুর্মু বিয়ের পর গ্রামে এসে শিক্ষার আলো জাগিয়ে তুলতে নিজের উদ্যোগেই খুলেছেন এক অবৈতনিক স্কুল। সেখানে সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় গ্রামের শিশুদের লেখাপড়া শেখানোর দায়িত্ব নেন তিনি। ওই বধূ তার স্কুলের আলাদা করে নামও দিয়েছেন।
‘মারাংবুরু জাহেরআয়ো ইতুন আষাড়া’। তবে এই বিদ্যালয় মালতিবালা বিদ্যালয় নামেই বেশি পরিচিত। এই এলাকায় বেশিরভাগ সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করলেও গ্রামে যে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে সেটি বাংলা মাধ্যমের। তাই শিশুদের তিনি শেখান মাতৃভাষা- অলচিকি ভাষা।
পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ এ
জানা গিয়েছে, সাড়ে ১১ টা থেকে শুরু হওয়া স্কুল দুপুর ১ টা ৩০ মিনিটেই শেষ হয়ে যায়। দেখতে দেখতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮ থেকে পড়ুয়ার সংখ্যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ এ। সকাল হলেই প্রাক প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ৪৫ জন পড়ুয়া ব্যাগ নিয়ে ছুটছে মালতির স্কুলে।
কোন রকম সরকারি সাহায্য ছাড়াই নিজেদের উদ্যোগে চলছে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের জিলিনসেরেং গ্রামে মালতির পাঠশালা। গ্রামবাসীরাও মালতি মুর্মুর এই সাধু উদ্যোগের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
কী বলছেন মালতি দেবী?
এই প্রসঙ্গে মালতি দেবী জানান, “উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরেই আমার বিয়ে হয়ে যায়। ২০১৯ সালের এপ্রিলে বউ হয়ে এই গ্রামে পা রাখি। কয়েকদিনের মধ্যেই বুঝতে পারি এখানকার ছেলে- মেয়েদের লেখাপড়ায় সেভাবে আগ্রহ নেই। কারণটা হল আর্থিক অভাব। তার উপর পড়াশোনার ক্ষেত্রে গাইড করার কোনও লোকজন নেই। তাই ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে নিজের ঘরেই পাঠদান শুরু করি। সেই সময় থেকে এখনও পর্যন্ত আমার স্বামী এই স্কুলের জন্য সবরকম সাহায্য করছেন।”
আরও পড়ুন: অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের জন্য ৫০% সংরক্ষণ, সমকামীদের নিয়েও বড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
স্ত্রীর কর্মকান্ডে আপ্লুত স্বামী
২৪ বছরের মালতির স্বামী বাঙ্কা মুর্মু স্ত্রীর এই কর্মকাণ্ডে বেশ আপ্লুত। তিনি বলেন, “স্ত্রীর এই কাজে আমি সবসময় ওর পাশে রয়েছি। প্রশাসন সাহায্য করুক বা না করুক গ্রামবাসীরা এই কাজে ঠিক এগিয়ে এসেছেন। আমাদের ইচ্ছে আগামী দিনে পঞ্চম থেকে অষ্টম পর্যন্ত পাঠ দেব। যেমন আমাদের সংসার তেমনি মালতির স্কুল। লেখাপড়ার পাশাপাশি বাচ্চাদের গানও শেখানো হয় বলে জানানো হয়েছে।”
অন্যদিকে আদিবাসী গৃহবধূর এই কর্মকাণ্ডে বাঘমুন্ডির বিডিও অফিসার আর্য বাবু জানিয়েছেন, “ওই আদিবাসী বধূ সত্যি-ই ভালো কাজ করছেন। বই-খাতা সহ সবকিছু জিনিস দিয়ে আমরা ওই স্কুলকে সাহায্য করব।”
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |