প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: দীর্ঘ ৭ বছর পর ফের কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সম্পত্তির সার্কেল রেট (Circle Rate of Property) বৃদ্ধি করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার! জানা গিয়েছে কলকাতা এবং সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার জন্য সার্কেল রেট ১৫ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। যার ফলে এখন থেকে ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিনতে গেলে ক্রেতাদের স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ বেশি টাকা গুণতে হবে। এদিকে সরকারের এই সিদ্ধান্তে কপালে হাত পড়ল ফ্ল্যাট বিক্রেতাদের। সংকটে পড়ল আবাসন শিল্পও।
কী এই সার্কেল রেট?
সাধারণত, কোনও সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশনের জন্য সরকার ন্যূনতম যে মূল্য বা দর বেঁধে দেয়, তাকেই বলে সার্কেল রেট। রাজ্যের অর্থ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, টানা সাত বছর ধরে সার্কেল রেটে কোনও বদল আনা হয়নি। তবে এবার থেকে ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিনতে গেলে ক্রেতাদের স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ বেশি টাকা গুণতে হবে বলে জানানো হয়েছে । আসলে এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য হল মার্কেট প্রাইসের সঙ্গে সার্কেল রেটের সামঞ্জস্য বজায় রাখা। এ ব্যাপারে অর্থ দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন যে এলাকা ভিত্তিতে এই বৃদ্ধির হার ১৫ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হবে।
কোথায় কত রেট বাড়ল?
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, নিউটাউনে সার্কেল রেট হয়েছে প্রতি বর্গফুট পিছু ৬২০৯ টাকা।যেখানে আগে ছিল ৩৫৩৫ টাকা। এক্ষেত্রে প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি বৃদ্ধি হয়েছে। বরানগরের বিটি রোড এলাকায় প্রতি বর্গফুট পিছু দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮৫০ টাকা, যেখানে আগে ছিল ৪,৭০৮ টাকা। টলিগঞ্জসহ একাধিক এলাকায় নতুন হারে সার্কেল রেট প্রতি বর্গফুটে ৮২৫০ থেকে বেড়ে ১০,২১২ টাকা করা হয়েছে। তপসিয়া এলাকায় সার্কেল রেট ছিল প্রতি বর্গফুটে ৫৮৮১ টাকা এখন তা বেড়ে হয়েছে ৯৮৫২ টাকা। সোনারপুর এলাকায় সার্কেল রেট বেড়ে ৬ হাজার ২৩৭ টাকা যেটা আগে ছিল ৩,৪১২ টাকা। বেহালা বড়িশা এলাকায় সার্কেল রেট ৪২৯২ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে প্রতি বর্গফুটে ৭০৯৫ টাকা হয়েছে। এবং মহিষবাথানে যেখানে আগে প্রতি বর্গফুটে ৬,৪৪২ টাকা ছিল সেখানে এখন মূল্য ১২ হাজার ৬৫ টাকা হয়েছে। সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুসারে গতকাল অর্থাৎ বুধবার থেকেই নতুন হার কার্যকর হয়েছে।
ফ্ল্যাট বিক্রিতে বড় সমস্যা!
এদিকে সার্কেল রেট এভাবে এতটা বেড়ে যাওয়ার ফলে তিন বেডরুম ফ্ল্যাট ও দুই বেডরুম ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন মূল্য ১ কোটি টাকার বেশি দামের আওতায় চলে আসতে চলেছে। তার ফলে স্ট্যাম্প ডিউটির ক্ষেত্রেও ধাক্কা রয়েছে। ১ কোটি টাকার নীচে স্ট্যাম্প ডিউটি ৬%, আর ১ কোটির বেশি হলে তা ৭%। ফলে অনেক ক্রেতাকেই অতিরিক্ত খরচ করতে হবে। অন্যদিকে সার্কেল রেট বৃদ্ধির জেরে ফ্ল্যাটের বিক্রিতেও বড় সমস্যা আসতে পারে বলে মনে করছেন বিল্ডিং ডেভেলপারদের একাংশ। এ ব্যাপারে ক্রেডাই ওয়েস্ট বেঙ্গলের প্রেসিডেন্ট সুশীল মোহতা বলেছেন, ‘যেখানে সার্কেট রেটের সঙ্গে মার্কেট প্রাইসের সামঞ্জস থাকবে, সেখানে সমস্যা হবে না। কিন্তু সার্কেল রেট মার্কেট প্রাইসের থেকে বেশি হলে আয়কর সংক্রান্ত জটিলতা তৈরি হবে।’
আরও পড়ুন: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ার শ্লীলতাহানি SFI নেতার! নেওয়া হল বড় পদক্ষেপ
সরকারের এই সার্কেল রেট বাড়ানোর সিদ্ধান্তে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও প্রশাসনের বিশ্বাস এই সিদ্ধান্তে স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি থেকে রাজস্ব একদিকে যেমন অনেক বাড়বে ঠিক তেমনই বাজারে সম্পত্তির লেনদেন আরও স্বচ্ছ হবে। রাজকোষে রাজস্ব বাড়লে রাজ্যের পরিকাঠামো উন্নয়ন, শহর পরিকল্পনা ও অন্যান্য সরকারি পরিষেবায় কাজে লাগতে পারে।