প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের দ্বন্দ্ব ও বিবাদ আজ থেকে নয়। দীর্ঘদিন ধরেই এই মতভেদ হয়ে আসছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি বঞ্চনার অভিযোগ মিটিংয়ে-মিছিলে বারবারই সরব হয়েছে শাসকদল। যার মধ্যে অন্যতম হল গ্রামীণ আবাস যোজনার (Pradhan Mantri Awas Yojana) বরাদ্দ। জানা গিয়েছে অনেকদিন ধরেই কেন্দ্র আটকে রেখেছে গ্রামীণ আবাস যোজনার বরাদ্দ টাকা। অনেকবার আবেদন জানানো হলেও মেলেনি সেই টাকা। শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চলতি বছর লোকসভা ভোটে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে কেন্দ্র টাকা না দিলেও রাজ্য নিজের পয়সায় গরিব মানুষদের জন্য বাড়ি তৈরি করে দেবে।
আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল যে ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্য সরকার এই টাকা দিয়ে দেবে। ২০ ডিসেম্বর থেকে এই প্রকল্পের প্রথম দফার টাকা উপভোক্তাদের হাতে তুলে দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তবে আবাস যোজনার টাকা দেওয়ার আগে প্রকৃত উপভোক্তা কারা, তা খতিয়ে দেখার জন্য সমীক্ষা করবে রাজ্য সরকার। এজন্য ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে সমীক্ষা করে তালিকা চূড়ান্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই গ্রামাঞ্চলে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রকাশ করা হচ্ছে আবাস যোজনার তালিকাও। তবে অনেক যোগ্য ব্যক্তির নাম না ওঠায় বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। আর এই আবহেই এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার নবান্নে শস্য বিমা এবং আবাস যোজনার অর্থবিলির শর্ত কী হবে, এই নিয়ে আলোচনার জন্য রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার এবং কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেছিলেন।
আবাস যোজনার শর্ত নিয়ে কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী?
সেই বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “কেন্দ্রের শর্ত অনুযায়ী নয়, আবাসের বাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের মানবিক নিয়ম মানবে। বাংলা আবাস প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় শর্ত লাগু করা হবে না।” জানা গিয়েছে আবাস যোজনার টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের আরোপিত শর্তের মধ্যে একটি মানবে না রাজ্য সরকার। কেন্দ্রের শর্তের মধ্যে অন্যতম ছিল তিন-চার চাকার গাড়ি থাকলে আবাস যোজনার অধীনে টাকা মিলবে না, কেউ সরকারি চাকরি করলে তিনি আবাস যোজনার সুবিধা পাবেন না। এই সমস্ত কেন্দ্রীয় শর্ত মানবে রাজ্য সরকার। কিন্তু যাঁরা বাড়ির একাংশ পাকা করে ফেলেছেন এবার তাঁরাও আবাস যোজনার টাকা পাবেন। অর্থাৎ এই একটা ক্ষেত্রে কেন্দ্রের আরোপিত শর্ত মানবে না রাজ্য সরকার।
শস্যবীমা নিয়েও নয়া সিদ্ধান্ত রাজ্যের
এছাড়াও এদিনের বৈঠকে রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা মেনে তালিকা থেকে যাঁদের নাম বাদ গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে যোগ্য কেউ বাদ গেলেন কি না, তা ভালো করে খতিয়ে দেখতে পুনরায় তালিকা রি-চেক করার জন্য পঞ্চায়েত দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি শস্যবিমার ক্ষেত্রেও ‘মানবিক’ দৃষ্টিভঙ্গির কথাই মাথায় রাখা হয়েছে। তিনি জানিয়ে দেন যে, ঘুর্ণিঝড় ‘ডানা’র জেরে বাংলার কৃষকরা কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সেটা খতিয়ে দেখতে দীপাবলি মিটলেই রাজ্যের দুই মন্ত্রী জেলায় জেলায় যাবেন। যাদের ক্ষতি হয়েছে তাদের সকলকেই দেওয়া হবে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ।