প্রীতি পোদ্দার: দেখতে দেখতে ২ মাসে পড়তে চলেছে আরজি কর কাণ্ডের ঘটনা। কিন্তু এখনো মেলেনি সুবিচার। আর তার জেরে এখনও রাস্তায় নেমেছে একাধিক সাধারণ মানুষ। শুধু তারা নন বিচারের দাবিতে ময়দানে নেমেছে একাধিক সেলিব্রিটি এবং বিশিষ্ট মানুষজন। তার সঙ্গে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। পরে সরকারের তরফে নিরাপত্তা ও পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে বেশ কিছু ইতিবাচক আশ্বাস পাওয়ার পর গত ২১ সেপ্টেম্বর কর্মবিরতি আংশিক প্রত্যাহার করে পুনরায় কাজে ফেরেন তাঁরা। কিন্তু এরই মধ্যে গত সপ্তাহে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর রোগীর পরিজনদের হামলার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার পর থেকেই ফের কর্মবিরতির গন্ধ পাওয়া গিয়েছে কলকাতার রাজপথে।
ফের দ্বিতীয়বার কর্মবিরতিতে জুনিয়র চিকিৎসকরা
আরজি কর-কাণ্ডে নির্যাতিতার বিচারের একাধিক অভিযোগ তুলে ফের পূর্ণ কর্মবিরতির পথে হাঁটলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে শুরু হয়ে গেল জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের শুনানির পর গভীর রাত পর্যন্ত চলা টানা ৮ ঘণ্টার দীর্ঘ জেনারেল বডির বৈঠকে বসেছিলেন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা। সেই বৈঠকে চিকিৎসকদের তরফ থেকে মোট দশ দফা দাবি পেশ করা হয়েছে। সেই দাবিগুলি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। যার ফলে পুজোর আগে ফের সরকারের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করল জুনিয়র চিকিৎসকরা।
১০ দফা দাবির চাপে ফের প্রশাসন
গত শনিবার জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে নিগ্রহের ঘটনার জেরে পানিহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে ইতিমধ্যেই কর্মবিরতি পালন করে চলেছে জুনিয়র ডাক্তারেরা। আর সেই আন্দোলনের ঝাঁঝ আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়ে রাজ্য জুড়ে নতুন করে দ্বিতীয়বার পূর্ণ কর্মবিরতির ডাক দিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের অভিযোগ রাজ্যের তরফ থেকে বার বার নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হলেও সেই কাজ করতে পারেনি প্রশাসন। যার ফলে গতকাল সুপ্রিম কোর্টেও এই নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল রাজ্য সরকার। যদিও সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে রাজ্যকে। আর তারপরেই জিবি বৈঠক শেষে ১০ দফা দাবি জানিয়ে সরকারকে চরম চাপে ফেললেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
জুনিয়র ডাক্তাররা যে ১০ দফা দাবি পেশ করেছেন জিবি বৈঠকের শেষে, সেই দাবিগুলির হল –
- নির্যাতিতার দ্রুত ন্যায়বিচার দিতে হবে।
- স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের অপসারণ।
- হাসপাতাল গুলিতে পুলিশি নিরাপত্তা আরও বাড়াতে হবে। তবে সিভিক ভলেন্টিয়ার রাখা যাবে না, মহিলা পুলিশকর্মীকেও নিয়োগ করতে হবে।
- সমস্ত সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় রেফারেল ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
- হাসপাতালের খালি বেডের মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
- ছাত্র সংসদ নির্বাচন করাতে হবে।
- হাসপাতালগুলিতে শূন্যপদ পূরণ করতে হবে।
- থ্রেট কালচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে হবে।
- দ্রুত সমস্ত হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজে টাস্ক ফোর্স গঠন করতে হবে এবং সমস্ত জায়গায় সিসিটিভি বসাতে হবে। শৌচালয়, হেল্পলাইন নম্বর, প্যানিক বোতাম চালু করতে হবে।
- পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং পশ্চিমবঙ্গ হেল্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে দুর্নীতি ও বেনিয়মের অভিযোগগুলির প্রসঙ্গে দ্রুত তদন্ত শুরু করতে হবে।