প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: আইনের রক্ষক হিসেবে আমরা সকলেই পুলিশকে মেনে আসি। কিন্তু সেই আইনের রক্ষক যখন তাঁর দায়িত্ব বা কর্তব্য ভুলে যায় তখন কি পুনরায় তাঁকে সেই আসনে রাখা যায়? রাজ্যে এমন একাধিক সাইবার ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে যেখানে রাজ্য পুলিশের সক্রিয়তা নিতে বারবার প্রশ্ন উঠে এসেছে। সম্প্রতি এক ফোনের কুপ্রস্তাব শুনে প্রতিবাদ করেছিলেন এক মহিলা আইনজীবী। ওপাশ থেকে হুমকি এসেছিল, বেশি বাড়াবাড়ি করলে ফোন নম্বর পর্ন সাইটে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এইবভিযোগ গ্রহণ করতে চাননি আইনের রক্ষক পুলিশ।
ঘটনাটি কী?
সূত্রের খবর চলতি বছরের মার্চ মাসে। রাজেশ সাধুখাঁ নামে এক ব্যক্তি এক মহিলা আইনজীবীর মোবাইল নম্বরে ফোন করে তাঁকে নানা কুপ্রস্তাব দেয়। তখন ঐ আইনজীবী পাল্টা বিষয়টি পুলিশে জানানোর কথা বললে ওই ব্যক্তি তখন গালাগাল দিয়ে বলে, ‘তোমার মোবাইল নম্বর পর্নোগ্রাফি সাইটে দিয়ে দেব। ট্রেনে, বাসে, ছড়িয়ে দেব তোমার নম্বর।’ ঠিক তার কিছুদিন পর থেকেই বিভিন্ন নম্বর থেকে ওই মহিলা আইনজীবীর ফোনে, ফোন আসতে থাকে ও তাঁকে নোংরা প্রস্তাব এবং গালাগালি দেওয়া হয়। সেই সময় তিনি জানতে পারেন কেউ ট্রেন থেকে কেউ বা বাস আবার কেউ ফেরিঘাট থেকে তাঁর নম্বর পেয়েছেন।
এরপর ওই আইনজীবী অভিযোগ জানানোর জন্য হাওড়ার নিশ্চিন্দা থানার দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশকে সবটা জানালেও কোনও সুরাহা হয়নি। অভিযোগ সেই সময় এক ডিউটি অফিসার ওই আইনজীবির থেকে সবটা জানার পর বলেন, ‘এরকম লাখ লাখ কল আসে। আমরা কত জনের পিছনে ছুটব?’ এমনকি ওই থানার আইসি-র কাছে গেলেও একই অভিজ্ঞতা হয় আইনজীবীর। আইসি তাঁকে বলেন, ‘থ্রেটনিংয়ের কোনও কমপ্লেন রেজিস্ট্রার হয় না।’ শেষে বাধ্য হয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই মহিলা আইনজীবী। আর তাতেই ক্ষুব্ধ বিচারপতি।
মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ বিচারপতি
গতকাল সেই মামলা ওঠে হাইকোর্টে। সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিচারপতি এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে রীতিমতো উষ্মাও প্রকাশ করতে দেখা যায় তাঁকে। একই সঙ্গে রাজ্যের থানাগুলির সাইবার ক্রাইমের পরিকাঠামো এবং অফিসারদের কী ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, এ ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট তলব করতে চেয়েছে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। পাশাপাশি লালবাজারের সাইবার শাখাকে ঘটনার তদন্তের নির্দেশও দিয়েছে আদালত।