সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: দিনের পর দিন বাড়ছে ঋণের বোঝা। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ২৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার (West Bengal)। এর ফলে মোট বাজার ঋণ দাঁড়াবে প্রায় ৭৮ হাজার কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের রিপোর্ট মারফৎ জানা যাচ্ছে, মার্চ মাসের মধ্যেই গোটা বছরের ঋণ প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা পৌঁছবে, যা রাজ্যের বকেয়া ঋণকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজার ঋণের জন্য মোট ৮২ হাজার কোটি টাকার বাজেট নির্ধারণ করেছিল। তবে রিপোর্ট বলছে, নতুন প্রতিশ্রুতি আর কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ ঘাটতির কারণে এই ব্যবধান আরও বেড়ে গিয়েছে। এমনকি তৃতীয় ত্রৈমাসিকের ঋণের পর ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, বছরের শেষ নাগাদ মোট ঋণের পরিমাণ প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা ছোঁবে।
কেন বাড়ছে ঋণের পরিমাণ?
আসলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঋণ বৃদ্ধির পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করছে বিশেষজ্ঞরা। তার মধ্যে প্রথম হল প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্প। কারণ এই প্রকল্পে কেন্দ্র সরকার বহুদিন ধরেই অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করেছে। আর সেই আবহে রাজ্য সরকার নিজস্ব তহবিল থেকেই এই প্রকল্পের চাহিদা মেটাচ্ছে। এমনকি বাংলার বাড়ি প্রকল্পের রাজ্যের প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
এছাড়া কেন্দ্র সরকার সম্প্রতি রাজ্যের গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্প MGNREGA বা এক ১০০ দিনের কাজের অর্থ আটকে রেখেছে। তার জন্য রাজ্যের তহবিল থেকে ৬৯০০ কোটি টাকা বকেয়া মেটাতে হচ্ছে। দুই বছরের বেশি সময় ধরেই রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছ থেকে এই প্রকল্পের অর্থ পাচ্ছে না।
𝗕𝗲𝗻𝗴𝗮𝗹 𝘁𝗼 𝗯𝗼𝗿𝗿𝗼𝘄 ₹𝟮𝟵,𝟬𝟬𝟬 𝗰𝗿𝗼𝗿𝗲 𝗶𝗻 𝗤𝟯.
Government of West Bengal plans to raise ₹29,000 crore in the third quarter of the 2025–26 financial year, bringing total market borrowings to about ₹78,000 crore by the end of the third quarter.
Finance… pic.twitter.com/4zm0cV2L5u
— The West Bengal Index (@TheBengalIndex) October 16, 2025
এছাড়াও রাজ্য সরকারের কর্মশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৩৭০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে, পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচির ফলেও ব্যয়ের চাপ অনেকটাই বেড়েছে। কারণ যখন বাজেট তৈরি করা হয়েছিল, তখন ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ প্রকল্প ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি এই প্রকল্পের জন্য প্রতি বুথে ১০ লক্ষ টাকা করে ব্যয় করছে রাজ্য সরকার। এমনকি রাজ্যে মোট ৮০ হাজারের বেশি বুথ থাকায় প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ মহিলাদের মাসে ২৫০০ টাকা, ৫০০ টাকায় গ্যাস সিলিন্ডার দেওয়ার ঘোষণা শুভেন্দুর
বিরোধীদের কটাক্ষ
এদিকে বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ী সতর্ক করে বলেছেন, ঋণ গ্রহণের পরিমাণ যদি বৃদ্ধি পায়, তাহলে রাজ্যের ঋণ পরিশোধের বোঝাও দিনের পর দিন বাড়বে। সরকার ভাড়া বাড়াতে বা রাজস্ব বাড়াতে প্রস্তুত নয়। তাই তারা এখন ঋণের উপরে নির্ভর করছে। তবে এই ঋণ যে আর্থিক বোঝা অনেকটাই বাড়াবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যদিও রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপকে সমর্থন করে বলেছেন যে, কেন্দ্রী তহবিল আটকে রেখেছে। সবাই জানে যে আমরা কেন ঋণ নিচ্ছি। কেন্দ্র সরকার আমাদের বৈধ পাওনা মেটাচ্ছে না।