সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: গতকাল দেশের সবথেকে নিরাপদ শহরগুলির তালিকা প্রকাশ্যে এসেছিল। আর সেখানে চমক দিয়েছিল কলকাতা। কারণ কলকাতাই সবথেকে সুরক্ষিত শহরের তকমা অর্জন করেছিল। তবে এবার শিশু নিখোঁজের (Child Missing) ঘটনা নিয়ে আবারও এক রিপোর্ট প্রকাশ্যে এল। আর সেখানেই উদ্বেগ বাড়ল বাংলার ক্ষেত্রে। জানা গিয়েছে, এবার সবচেয়ে বেশি শিশু নিখোঁজ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ থেকেই। আর সংখ্যাই গোটা দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলির থেকে অনেকটাই বেশি।
ভয়াবহ পরিসংখ্যান বাংলায়
উল্লেখ্য, এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ন্যাশনাল ক্রাইমস রেকর্ড ব্যুরো (NCRB)। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালে শুধু পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১৪৬৬টি শিশু নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। আর এই সংখ্যা দেশের যেকোনও রাজ্যের তুলনায় অনেকটাই বেশি। এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তামিলনাড়ু। সেখান থেকে ১২,০৯১টি শিশু নিখোঁজ হয়েছে। তৃতীয় স্থানে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ। সেখান থেকে ৭৮২৬ জন শিশু নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে।
এদিকে রিপোর্ট বলছে, ২০২২ সালে তুলনায় ২০২৩ সালে নাকি দেশের সব জায়গায় শিশুদের নিখোঁজের সংখ্যা বেড়েছে। ২০২২ সালে দেশে ৮৩,৩৫০টি শিশু নিখোঁজ হয়েছিল। আর এক বছরের ব্যবধানে সেই সংখ্যা বেড়ে ৯১,২৯৬ তে দাঁড়িয়েছে। সবথেকে বড় বিষয়, এদের মধ্যে ৬৮,৮৩৫ জন কন্যা শিশু।
উদ্ধারের দৌড়ে সেরা কেরল
এদিকে সব রাজ্যের মধ্যে আশার আলো দেখাচ্ছে কেরল। কারণ সেখানে ৯৫.৯ শতাংশ শিশুকে উদ্ধার করা যাচ্ছে। অর্থাৎ, নিখোঁজ হওয়া প্রায় প্রত্যেকটি শিশুকেই খুঁজে বের করছে তারা। হ্যাঁ, ২০২৩ সালে কেরলে মোট ২৩৬৯টি শিশু নিখোঁজ হয়েছিল। এর মধ্যে ১৭ জনের সন্ধান মেলেনি। বাদবাকি সবারই খোঁজ মিলেছে। অন্যদিকে দেশের জাতীয় গড় অনেকটাই কম। কারণ মাত্র ৬৬ শতাংশের মতো নিখোঁজ শিশুকে দেশে উদ্ধার করা হয়েছে।
মানবপাচারেও কিছুটা হ্রাস
তবে রিপোর্টে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। জানা যাচ্ছে, যদিও শিশু নিখোঁজের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু মানবপাচারের ঘটনা কিছুটা কমেছে। ২০২৩ সালের দেশে ২১৮৩টি মানব পাচারের মামলা দায়ের করা হয়েছিল, যা ২০২২ সালে তুলনায় ৩ শতাংশ কম। আবার আগের বছরের সেই সংখ্যা ছিল ২২৫০। এমনকি এক সময় এই সংখ্যা ছিল সবথেকে বেশি। কারণ ২০১২ সালে দেশে ৬২৮৮টি মানবপাচারের ঘটনা ঘটেছিল। আর এর মধ্যে প্রায় ৩৫০০ জন ছিল শিশু।
আরও পড়ুনঃ মহানন্দাতে হড়পা বান! ক্ষতিগ্রস্ত ২০০-র বেশি বাড়ি, মহা বিপর্যয় উত্তরবঙ্গে
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, এর পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। মূলত দারিদ্র্যতা, পারিবারিক অশান্তি, শিশুশ্রমের চাহিদা আর পাচার চক্রের সক্রিয়তার কারণেই দেশের এই পরিস্থিতি। গ্রামীণ এলাকার অনেক শিশু কাজের আশায় শহরে আসে। কিন্তু পরে তাদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেক সময় দেখা যায়, অভিভাবকরা নিজেরাই আর খোঁজ করে না। ফলত সঠিক পরিসংখ্যানও পাওয়া যায় না।