সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: এমনিতেই রাজ্যের (West Bengal) অর্থনীতিতে টালমাটাল অবস্থা। আর তার মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজ্য সরকারের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। সাম্প্রতিক রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, 2024-25 অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ নাকি রাজ্যের GDP-র প্রায় 38 শতাংশে গিয়ে ঠেকতে পারে!
অর্থাৎ, রাজ্যের অর্থনীতির তুলনায় ঋণের বোঝা একেবারে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আর এহেন পরিস্থিতিতে, বকেয়া DA নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কড়া নির্দেশ যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, রাজ্যের সরকারের কর্মীদের বকেয়া ডিএ-র অন্তত 25 শতাংশ ফিরিয়ে দিতে হবে, তাও আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে।
কী বলেছে সুপ্রিম কোর্ট?
আসলে পঞ্চম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা বহুদিন ধরেই তাদের বকেয়া ডিএ পাওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। আর এবার সুপ্রিম কোর্ট তাতে সবুজ সংকেত দিয়েছে। তবে প্রথম দিকে আদালত 50 শতাংশ বকেয়া ডিএ দেওয়ার কথা বললেও রাজ্যের পক্ষে আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভির যুক্তির ভিত্তিতে তা 25 শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আর এই সামান্য 25 শতাংশ ডিএ যে রাজ্যের কোষাগারে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এত টাকা আসবে কোথা থেকে?
এখন এই প্রশ্নই উপরমহলের লোকজনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। সরকারের সামনে আপাতত দুটি রাস্তা খোলা। প্রথমত, সুপ্রিম কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করা। যদিও এতে সময় ব্যয় হবে, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হবে না।
আর দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের বরাদ্দ কমিয়ে সেই অর্থ দিয়ে ডিএ মেটানো। তবে এখানেই হচ্ছে জলঘোলা। কারণ, রাজ্য সরকার ইতোমধ্যেই কেন্দ্রের অর্থ না পেয়ে বহু সামাজিক প্রকল্প নিজের কোষাগার থেকেই দিতে শুরু করেছে। যেমন 100 দিনের কাজ, বাংলা আবাস যোজনা ইত্যাদি।
আরও পড়ুনঃ আরও ২% DA বাড়ল রাজ্য সরকারি কর্মীদের, সঙ্গে আরও সুবিধা
অপ্রয়োজনীয় খরচ না করে মেটানো হোক DA
তবে ডিএ মামলায় কর্মীদের পক্ষে দাঁড়িয়ে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সাওয়াল করেন, প্রকল্প বন্ধ করে নয়, বরং সরকারের অপ্রয়োজনীয় খরচ কিছুটা কমিয়েই এই বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেওয়া যাবে। তিনি অভিযোগ করেছেন, পুজোর সময় ক্লাবগুলোকে অনুদান, মন্দির সংস্কারের বাড়তি খরচ, অবাঞ্ছিত উৎসবে খরচ, এই সমস্ত না করে ডিএ মেটানো সবথেকে বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
আর বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, যদি ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ ডিএ মেটানোর ঘোষণা আসে, তাহলে সরকারের ঘাড়ে পড়বে প্রায় 40 হাজার কোটি টাকার বোঝা। আর এই পরিস্থিতিতে আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে জোর জল্পনা।