সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: যে দিনটির জন্য সবাই অপেক্ষা করছিল, সেই অপেক্ষার অবসান। ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় (SSC Recruitment Scam) সুপ্রিমকোর্ট একধাক্কায় ২৫,৭৫২ জন শিক্ষকের চাকরি চলে গেল। কিন্তু অবাক করার বিষয় হল, একজনের চাকরি রক্ষা পেল। আর তিনি হলেন সোমা দাস। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করা এই শিক্ষিকার জন্যই একমাত্র ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু কেন হাজারো চাকরি বাতিলের মাঝে সোমা দাসের চাকরি অক্ষত থাকলো? জানতে হলে অবশ্যই প্রতিবেদনটি পড়ুন।
সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়!
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতির সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে, মানবিক কারণেই একমাত্র সোমা দাসের চাকরি বাতিল করা হচ্ছে না। অর্থাৎ, আদালত স্বীকার করে নিয়েছে, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি থাকলেও সোমা দাসের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। কারণ তিনি মারণ রোগ ক্যান্সারে আক্রান্ত।
সোমা দাসের লড়াইয়ের গল্প
সোমা দাস ২০১৬ সালে নবম-দশম শ্রেণীর শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার পরীক্ষায় বসে ছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, মেধা তালিকায় নাম থাকার পরও তিনি চাকরি পাননি। এরপর তিনি আইনি লড়াই শুরু করেন। তার দাবি প্রাপ্য চাকরি। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! ২০১৯ সালে তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। কিন্তু তবুও তিনি লড়াই চালিয়ে যান। রোদ, ঝড়, বৃষ্টি মাথায় রেখে কলকাতার রাস্তায় বিক্ষোভ, আদালতের দরজায় দরজায় ঘোরা, এই দীর্ঘ লড়াইয়ের সাক্ষী হয়েছে সোমা দাস। এমনকি রাস্তায় ধর্না দিতেও পিছপা হননি তিনি।
সোমার পাশে দাঁড়ায় আদালত
সোমার এই অসহায় অবস্থার কথা আদালতে জানিয়েছিল তার মামলাকারীরা। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ২০১৯ সালে রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করেছিল সোমাকে চাকরি দিতে। এরপর ২০২২ সালে স্টাফ সিলেকশন কমিশন (SSC) তাকে মথুরা হাইস্কুলে বাংলা শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ করেন।
সোমা দাসের প্রতিক্রিয়া
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় পেয়ে সোমা দাসের কন্ঠে নিম্নস্বর লক্ষ্য করা গিয়েছে। তিনি আনন্দের পাশাপাশি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, “আমি কখনো চাইনি যে, আমার চাকরি থাকুক এবং বাকিদের চাকরি চলে যাক। এই রায় আমার কাছে সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত এক ঘটনা। কারণ গোটা প্যানেলে অনেকেই চাকরির যোগ্য ছিলেন।”
বাকিদের চাকরি গেল কেন?
সুপ্রিম কোর্ট মনে করছে, SSC নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি ছড়িয়েছে, যা মেনে নেওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু সোমা দাসের ক্ষেত্রে একমাত্র ঘটনাটি ব্যতিক্রম। তিনি আইনি লড়াই করে প্রমাণ করেছেন যে, তার চাকরি কোনরকম সুপারিশে নয়, বরং নিজের যোগ্যতায় পেয়েছেন। তার উপর তার ক্যান্সারের বিরুদ্ধে মরণবাচনের লড়াই, যা আদালত মানবিক দিক থেকেই বিবেচনা করেছে।
আরও পড়ুনঃ বিরাট ধাক্কা! গরিব হচ্ছেন আম্বানি, হারালেন বিপুল সম্পদ, এখন কত নম্বরে?
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় নিঃসন্দেহে এক বিরল ঘটনা। হাজার হাজার চাকরি বাতিল হলেও একজনের লড়াই এবং অদম্য ইচ্ছা আর আদালতের মানবিকতার কারণে সোমা দাসের চাকরি বেঁচে গেল। কিন্তু বাকিদের ভবিষ্যৎ কী হবে সেটাই এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন।