B.A পাস সিভিক ভলান্টিয়ার, ট্রাফিক সামলে বিনাপয়সায় পড়ান দুঃস্থ শিশুদের! দেন মিডডে মিলও

Published on:

civic volunteer hiralal

শ্বেতা মিত্র, বলাগড়ঃ ফের একবার শিরোনামে উঠে এল সিভিক ভলেন্টিয়ার। গত ৯ আগস্ট আরজিকর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে পেশায় সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলা জুড়ে ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয় সাম্প্রতিক সময় জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে। আরজিকর ঘটনার প্রতিবাদে সিঁথির মোড়ে হওয়া এক প্রতিবাদ মঞ্চে এক পেশায় অন্য এক সিভিক ভলেন্টিয়ারের বিরুদ্ধে মদ্যপ অবস্থায় তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ ওঠে। এ সকল নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিভিক ভলেন্টিয়ারদের এখন অন্য চোখেই দেখছেন সাধারণ মানুষ। শুধু তাই নয় তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন একের পর এক মানুষ। কিন্তু হুগলির হীরা সরকার বা হীরা মাস্টার একদমই অন্যরকম। তিনি নিজেও একজন পেশায় সিভিক ভলেন্টিয়ার, কিন্তু তিনি যা করেছেন তা দেখে সিংহভাগ মানুষ কুর্নিশ জানাচ্ছেন।

নজির গড়লেন এই সিভিক ভলেন্টিয়ার

একদিকে যখন সঞ্জয় রাইকে ঘিরে সমগ্র বাংলা উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে সেখানে অন্য দিকে অন্য এক সিভিক ভলেন্টিয়ার হীরা সরকার যা করেছেন তা শুনে উচমকে গিয়েছেন সকলে। প্রতিদিন তিনি রোদ, ঝড়, জল উপেক্ষা করে হুগলির বলাগরে ট্রাফিক ব্যবস্থা সামলে আসছেন তিনি। জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে বলাগড় কলেজ থেকে বিএ পাস করেন হীরালাল সরকার। এরপর হুগলি গ্রামীণ পুলিশের বলাগড় থানার সিভিক ভলেন্টিয়ারের কাজ পান। মেয়েদের উদ্দেশ্যে দশভুজা বলা হয়। কিন্তু এই হীরালাল সরকারকেও যদি এই তকমা দেওয়া যায় তাহলে খুব একটা ভুল হবে না।

সকালে ট্রাফিকের দায়িত্ব সামলে বিকেলে বাবার সবজির ব্যবসায় হাত লাগান। তবে নিজের দায়িত্ব কর্তব্যে অবিচল থাকেন। তিনি যে এলাকার মানুষ সেখানে বেশিরভাগ মানুষই আদিবাসী। এখানকার এমন বহু পরিবার রয়েছে যারা নিজেদের সন্তানের টিউশনের ব্যবস্থা করতে পারেন না। এখানে অবস্থায় একপ্রকার হিরো রূপে আবর্তন হয়েছে হীরালাল সরকারের। গরীব দুঃখীর সন্তানদের একদম বিনা পয়সায় তিনি পড়াশোনা সুযোগ করে দিয়েছেন। গড়ে তুলেছেন একটি আস্ত পাঠশালা।

হীরালালের পাঠশালা

নাটগড় এলাকায় রাস্তার পাশেই পাটকাঠির বেড়া দিয়ে হীরালাল তৈরি করেছেন একটি চালা ঘর। সেখানেই প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন পড়ুয়া স্কুলে যাবার আগে তার কাছে পড়াশোনা শিখতে আসে। কিছুটা সময় লেখাপড়া করিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের হাত ধরে রাস্তা পার করে স্কুলে যেতে সাহায্য করেন হীরা। হীরার পাঠশালা নামে পরিচিত হয়েছে এই ঘরটি। জানলে অবাক হবেন এই স্কুলে মিড ডে মিল অবধি পায় পড়ুয়ারা। হীরার পাঠাশালায় পড়া শেষে পড়ুয়ারা পায় বিস্কুট আর লজেন্স।

WhatsApp Community Join Now

কী বলছেন হীরালাল

এইটা পাঠশালা প্রসঙ্গে হীরালাল বলেন, ‘এই এলাকা সবটাই আদিবাসী অধ্যুষিত। অনেকেই মনে করেন এরা পিছিয়ে পড়া মানুষ। আমি যেহেতু এখানে ট্রাফিকের দায়িত্ব সামলাচ্ছি তাই কাজের ফাঁকেই তাদের পড়াশোনাটা একটু দেখিয়ে দিই । তাতে তারা কিছুটা হলেও শিখতে পারে। যারা প্রাইভেট পড়তে দিতে পারেনা তাদের ছেলে মেয়েদের আমি শিখিয়ে দিই। মূলত তাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ তৈরি করতেই আমার এই উদ্যোগ। সমাজের পাশে থেকে মানুষের জন্য কাজ করতে ভাললাগে।’

সঙ্গে থাকুন ➥
X