পশুবলির বিরুদ্ধে মামলা, কলকাতা হাইকোর্ট পাল্টা বলল ‘সবাইকে নিরামিষাশী করা সম্ভব না’

Published on:

high court

প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: দক্ষিণ দিনাজপুরের একটি কালীমন্দিরে পশুবলির রীতি রয়েছে। সেই মন্দিরে নাকি ১০ হাজার পশুবলি হয়। পশুদের এই অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তাই পশুবলি রোধ করার উপর নিষেধাজ্ঞার আর্জি নিয়ে এবার কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছে এক ব্যক্তি। আর সেই মামলা উঠল গতকাল বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের অবকাশকালীন বেঞ্চে।

মামলা প্রসঙ্গে বিস্ফোরক মন্তব্য বিচারপতির বেঞ্চে

WhatsApp Community Join Now

সোমবার মামলাটি ওঠার পর বিচারপতি মামলাকারীর আইনজীবীকে প্রশ্ন করে যে “মামলাকারী কি শুধু একটি মন্দিরের ক্ষেত্রেই এই নিষেধাজ্ঞা চান? না কি সামগ্রিক ভাবে পশুবলি বন্ধ করার আবেদন নিয়ে এই জনস্বার্থ মামলা? ” জবাবে ম্যামলাকারীর আইনজীবী জানান, “শুধুমাত্র একটি মন্দিরকে কেন্দ্র করেই এই মামলা।” তখন দুই বিচারপতির বেঞ্চের মন্তব্য, “যদি গোটা পূর্ব ভারতের সকলকে নিরামিষাশী করা মামলাকারীর চূড়ান্ত লক্ষ্য হয়, তবে তা সম্ভব নয়।” এদিন মামলাকারীর আইনজীবী আরও সংযুক্ত করেন যে, রাসপূর্ণিমার পরে ১০ হাজারেরও বেশি পশুবলি দেওয়া হয় ওই মন্দিরে। কিন্তু সংবিধানের ২৫ অনুযায়ী কোনো জরুরি ধর্মীয় আচার পালনের অধিকারের মধ্যে এই পশুবলির রেওয়াজ পড়ে না।

মামলাকারি আইনজীবীর মন্তব্য শুনে দুই বিচারপতির বেঞ্চ প্রশ্ন করেন, “আপনি কী ভাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন? আপনি কিসের ভিত্তিতে বলছেন এটি জরুরি ধর্মীয় আচারের মধ্যে পড়ে না? বাংলার এই অঞ্চলে এবং পূর্ব ভারতে ধর্মীয় আচারের সঙ্গে উত্তর ভারতের ধর্মীয় আচার সম্পূর্ণ এক নয়। এমনকি পৌরাণিক চরিত্রেরা আদৌ নিরামিষ খেতেন না আমিষ খেতেন, তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।” শুধু তাই নয় এদিন আদালত আরও সংযুক্ত করে বলেন যে, এ ভাবে আমিষকে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া যায় না। এমনও মানুষ আছেন যাঁরা মুরগির মাংস খান। কিন্তু মুরগি কাটা দেখতে পারেন না। তাহলে তাঁদের ক্ষেত্রে কী বলবেন?”

সুপ্রিম কোর্টের এই সংক্রান্ত পুরনো নির্দেশ উঠে এল

এদিন অ্যাডভোকেট জেনারেল সুপ্রিম কোর্টের একটি পুরনো নির্দেশের কথাও তুলে ধরেন। যেখানে বলা হয়েছিল, পশুবলির উপর নিষেধাজ্ঞার নির্দেশ দিতে পারে না আদালত। একমাত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে বিধানসভা। শুধু তাই নয় অ্যাডভোকেট জেনারেল একই সঙ্গে পশুদের উপর অত্যাচার দমন আইনের ২৮ নম্বর ধারার কথাও তুলে ধরেন। যেখানে বলা হয়েছে ধর্মীয় কারণে কোনও সম্প্রদায়কে পশুবলির অনুমতি দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।

সবশেষে মামলাকারীর আইনজীবীকে বিচারপতি বসু পাল্টা প্রশ্ন করেন, “যদি আদালত সব পশুবলি বন্ধ করার নির্দেশ দেয়, তবে তা কীভাবে কার্যকর হবে?” যদিও হাই কোর্টে আগে থেকেই এই সংক্রান্ত একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তাই অবকাশকালীন বেঞ্চের এই মামলাটিকেও আগের মামলার সঙ্গে যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

সঙ্গে থাকুন ➥
X