প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: ঠান্ডার আগমনীতে এবার সকলের অপেক্ষা হাড় কাঁপানো শীতের। আলিপুর আবহাওয়া অফিস বলছে, ‘জেট স্ট্রিম’-এর হাত ধরে বঙ্গে ঠান্ডার ‘রাত দখল’। কারণ এর প্রভাবেই অগ্রহায়ণে হেমন্তের দ্বিতীয় ভাগে হিমের জোরাল অনুভূতি মিলছে। সারাটা দিন যেমন তেমন চললেও সন্ধ্যা নামার পরে হিমেল হাওয়ায় বেশ ভালোরকম শীত অনুভূত হচ্ছে । আপাতত এই পরিস্থিতি চলবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। কিন্তু ঠান্ডার এই ধামাকেদার ইনিংস এর মাঝেই ফের ঘূর্ণিঝড়ের কাঁটা উঁকি মারছে সাগরে।
কী বলছে মৌসম ভবন?
ভারতীয় মৌসম ভবনের তরফে জানানো হয়েছে, আগামীকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আন্দামান সাগর এবং সংলগ্ন এলাকার উপরে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হতে পারে। যা পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। এবং আগামী শনিবার দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উপরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হবে। তারপর সেটি আরও পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের উপরে একটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। আর গভীর নিম্নচাপ মানেই ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। তবে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গে ভারী বৃষ্টি হবে না। একমাত্র বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে তামিলনাড়ু, পুদুচেরি এবং কড়াইকালের কয়েকটি জায়গায়।
ঘূর্ণিঝড়ের কতটা প্রভাব পড়বে বঙ্গে?
আসলে প্রতি বছর মার্চ থেকে মে মাস এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বছরের এই তিন তিন মাস বঙ্গোপসাগরে ‘সাইক্লোন সিজন’ হিসাবে পরিচিত। এই সময়ে সমুদ্রের জল মাটির চেয়ে বেশি গরম হওয়ায় সমুদ্রের ওপরে জলীয় বাষ্প জমা হয়। প্রধানত সেই কারণেই বছরে দু’বার তিন মাস করে সমুদ্র ঘূর্ণিঝড় প্রবণ হয়ে থাকে। তবে এই শীতের আবহে এবার আসা করা যাচ্ছে বাংলায় কোনো ঘুর্ণিঝড়ের আশঙ্কা নেই। এদিকে শীতের আবহে মধ্য এশিয়ার দিক থেকে অবাধে প্রবেশ করছে উত্তুরে হাওয়া। যার নিয়ন্ত্রক এই জেট স্ট্রিম। এই বছর এখনও পর্যন্ত কোনও পশ্চিমি ঝঞ্ঝার বাধার মুখে না পড়ার ফলে ঠান্ডা বাতাস অবাধে ঢুকছে উত্তর ভারতের রাজ্যগুলোতে। তার প্রভাব পড়ছে বঙ্গেও ৷ সবচেয়ে বেশি শীতের আমেজ অনুভূত হচ্ছে পশ্চিমের জেলাগুলিতে।
দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া
গত কয়েকদিন ধরেই দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া শুষ্ক এবং শীতল থাকছে। আর সেই ধারা বজায় থাকবে আগামী সপ্তাহের গোড়ার দিক পর্যন্ত। এমনটাই বলছে হাওয়া অফিস। আজও দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় অর্থাৎ কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়া জেলার আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে। কোথাও কোনো বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের দুটি জেলায় অর্থাৎ পশ্চিম মেদিনীপুর এবং পশ্চিম বর্ধমান এর একটি বা দুটি অংশে হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে।
উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া
উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রেও দেখা যাবে দক্ষিণবঙ্গের মত আবহাওয়া। আজও উত্তরবঙ্গের কোনও জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদাতে শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করবে। বৃহস্পতিবার, শুক্রবার, শনিবার এবং রবিবারও উত্তরবঙ্গের সব জেলার আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে। কোথাও বৃষ্টি হবে না। তবে দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ দিনাজপুর এর একটি বা দুটি অংশে হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা থাকবে।