বিক্রম ব্যানার্জী, কলকাতা: বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে (Border-Gavaskar Trophy) ভারতের পরাজয় যন্ত্রণায় মলম লাগাতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন ভরসার কাঁধেরা। অজিভূমিতে যাঁদের আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে সম্মান রক্ষার লড়াইটা শুরু করেছিল ভারত, সেই মহা তারকারাই দলের দুঃসময়ে গুটিয়ে গিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার তোপের মুখে পড়ে রোহিত-বিরাটদের গলদঘর্ম অবস্থায় ভারতকে কাঁধে তুলে এগোচ্ছিল বাকিরা।
তবে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং দাপট সেই পথে কাঁটা ছিটিয়ে দেয়। বলে রাখা ভাল, শুধু ভারতীয় ব্যাটাররাই নন, দুর্ভাগ্যের জালে জড়িয়ে দলকে গাড্ডায় ফেলেছেন বোলারাও। কাজেই যাঁদের ভুলে অস্ট্রেলিয়ার কাছে 1-3 ব্যবধানে মাথা ঝোঁকানোর পাশাপশি WTC ফাইনাল থেকে ছিটকে গেল ভারত, সেই সব ব্যর্থ ভারতীয় ক্রিকেটারের তালিকা রইল এই প্রতিবেদনে।
রোহিত শর্মা
হিটম্যানখ্যাত রোহিত শর্মাকে পছন্দের তালিকা থেকে আগেই সরিয়ে দিয়েছেন বহু ভক্ত। নেপথ্যে ভারতীয় মহা তারকার ধারাবাহিক খারাপ পারফরমেন্স। নিউজিল্যান্ড টেস্ট থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের বেশিরভাগ ম্যাচেই মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন শর্মা। ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠা তো দূর অস্ত, ব্যাটে বল লাগিয়ে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের একটি টেস্টেও অর্ধশত রানের গন্ডি ছুঁতে পারেননি তিনি। যার জেরে সিডনি টেস্ট থেকে ছাঁটাই করা হয় তাঁকে। যদিও এই ঘটনার আগে থেকেই রোহিতের দুর্বল ফর্ম প্রশ্নবানে বিদ্ধ হতে শুরু করে। প্রশ্ন ওঠে খেলোয়াড়ের অবসর নিয়েও। এবার সেই জল্পনায় নতুন মাত্রা জুগিয়েছে সিডনির পরাজয়।
বিরাট কোহলি
রোহিতের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ব্যর্থতার বৃত্ত চওড়া করেছেন বিরাট কোহলিও। পার্থ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে বহু প্রতীক্ষিত সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে অবস্থান জানান দিলেও এরপর আর দলের দায়িত্ব কিং কোহলির কাঁধে ওঠেনি। বিরাটের ব্যাট থেকে আসেনি আর একটি হাফ সেঞ্চুরিও। কাজেই বহুবার দলকে দুঃসময়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সৈনিকের এহেন দুরবস্থা দেখে নিন্দায় সরব হয়েছেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার থেকে শুরু করে সমর্থক সকলেই। প্রশ্ন উঠেছে কোহলির কেরিয়ার নিয়েও। বলা বাহুল্য, মেলবোর্নের মাটিতে তাঁর অসফল ইনিংস ধরা দিয়েছে সিডনিতেও। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পঞ্চম অর্থাৎ শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে 17 এবং দ্বিতীয়টিতে মাত্র 6 রান করে বাজেভাবে আউট হয়েছেন কোহলি।
শুভমন গিল
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে যখন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা মুখ থুবড়ে পড়ছে ঠিক সেই সময়ে রোহিতকে সরিয়ে তাঁর জায়গায় মাঠে নামানো হয় তরুণ ব্যাটার শুভমন গিলকে। তবে দলের হয়ে সিডনি টেস্টে নেমে মান রক্ষা করতে পারেননি তিনি। কামিন্স বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাট উঁচিয়ে দাঁড়ালেও সিডনি টেস্টের প্রথম ইনিংসে 20 এবং দ্বিতীয়টিতে মাত্র 13 রান করে সাজঘরে ফিরেছিলেন গিল। সেই সাথে গোটা সিরিজে অংশ নেওয়া একটি টেস্টেও হাফ সেঞ্চুরির নজির গড়তে পারেননি ভারতের এই তরুণ। যা দলের জন্য সত্যিই দুর্ভাগ্যের।
ব্যর্থ কেএল রাহুলও
বর্ডার গাভাস্কার সিরিজের উদ্বোধনী টেস্ট অর্থাৎ পার্থের ময়দানে দুর্দান্ত ছন্দে ছিলেন ভারতের 1 নম্বর জার্সি কে এল রাহুল। ফলত তরুণ ব্যাটসম্যানের ব্যাটে ভরসা করে পরবর্তী টেস্ট গুলিতে ওপেন করতে নামানো হয় কেএলকে। তবে তার প্রতিটিতেই ব্যর্থ হয়েছেন রাহুল। অসফলতার পরিধি বেড়েছে সিডনি টেস্টেও। সিডনির মাঠে পার্থ টেস্টকে স্মরণ করে বড় রান গড়ার ইচ্ছে ছিল ঠিকই, কিন্তু তাতে জল ঢেলেছে অস্ট্রেলিয়া। যার জেরে পঞ্চম টেস্টের প্রথম ইনিংসে 4 এবং পরেরটিতে 13 রান করে মাঠ ছাড়তে হয় রাহুলকে।
বিশেষ জায়গা করতে পারেননি সিরাজ
সিডনি টেস্টে বল হাতে জ্বলে উঠলেও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গোটা সিরিজের নিরিখে সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি সিরাজ। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে, অজি বাহিনীর বিরুদ্ধে ফাস্ট বোলার হিসেবে জসপ্রীত বুমরাহ ছাড়া আর কেউই সেভাবে অস্ট্রেলিয়ার ভয়ের কারণ হয়ে উঠতে পারেননি। বোলিং পারফরমেন্স ঠিকঠাক থাকলেও অতিরিক্ত রান দিয়ে দ্রুত উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা জাহির করতে পারেননি ভারতীয় পেসার সিরাজ। উল্লেখ্য, সিরিজের একেবারে শেষ লগ্নে পৌঁছে কামাল করেছিল সিরাজের বল। সিডনি টেস্টে শত্রু শিবিরে আঘাত হেন 4 উইকেট তুলেছেন সিরাজ। যার কারণে স্বল্প হলেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন ভারতীয় তারকা।