প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: প্রতিটি রাজ্যে শিক্ষার মান এবং হার সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে থাকে ভিন্ন শিক্ষাবর্ষে। কোন রাজ্যে কেমন পরিস্থিতি সে বিষয়ে প্রতি বছরই একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে কেন্দ্র। আর এই রিপোর্টের সমীক্ষার দায়িত্ব পালন করে থাকে শিক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘ইউনিফায়েড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাস’। চলতি বছরেও এর কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। বস্তুত, রাজ্যগুলি থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এই রিপোর্ট তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রক। রাজ্য সরকারের তরফেই একটি অনলাইন ব্যবস্থায় তথ্য আপলোড করা হয়। আর এবার সেই রিপোর্টে উঠে এল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
শিক্ষাবর্ষে ভর্তির নিরিখে বেহাল অবস্থা বাংলায়
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ‘ইউনিফায়েড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাস’ এর রিপোর্ট। প্রায় ২০০ পাতার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এই রিপোর্টে বাংলার মান সবচেয়ে নিম্নমুখী। কেন্দ্রের রিপোর্টে গত শিক্ষাবর্ষে রাজ্যে এক জন শিক্ষক থাকা স্কুল রয়েছে মোট ৬ হাজার ৩৬৬টি। পাশাপাশি ১২৯৫৪ টি স্কুলে কোনও পড়ুয়া ভর্তি হয়নি গত শিক্ষাবর্ষে। সেই স্কুলগুলিতে শিক্ষক ছিলেন ৩১ হাজার ৯৮১ জন। উল্টোদিকে আবার প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার স্কুলে পড়ুয়া ভর্তি হলেও সেখানে মাত্র এক জন করে শিক্ষক নিযুক্ত থেকেছেন। তার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের হাল খুবই বেহাল।
বাংলার মত রাজস্থানেও একই হাল
জানা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে গত শিক্ষাবর্ষে ৩২৫৪ টি স্কুল রয়েছে যেখানে কোনও পড়ুয়াই গত শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়নি। সম্পূর্ণ ছাত্রশূন্য ছিল। অথচ কোনও পড়ুয়া না থাকা এই স্কুলগুলিতে ১৪ হাজার ৬২৭ জন শিক্ষক রয়েছে। আবার এমন অনেক স্কুলও রয়েছে যেখানে পড়ুয়া ভর্তি হলেও শিক্ষক রয়েছেন মাত্র এক জন। এদিকে তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের পরেই উঠে এসেছে রাজস্থানের নাম। সেখানে ২১৬৭টি স্কুলে গত শিক্ষাবর্ষে কোনও পড়ুয়া ভর্তি হয়নি। এরপরে অর্থাৎ তৃতীয় স্থানে রয়েছে তেলঙ্গানা। এই রাজ্যে ২০৯৭টি স্কুলে গত শিক্ষাবর্ষে কোনও পড়ুয়া ভর্তি হয়নি।
কেন্দ্রের এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরেই শিক্ষক সংগঠনগুলি থেকে বিভিন্ন মিশ্র প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল জানিয়েছেন, “এই পরিসংখ্যান থেকে এটাই জানা যাচ্ছে যে শুধুমাত্র ভাতা পাইয়ে দিয়ে বা ব্যাগ, খাতা, ট্যাব পাইয়ে দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন করা যায় না।”
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের ইউনিফাইড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাস রিপোর্টে আরও এক ভয়ঙ্কর তথ্য সামনে উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে, হরিয়ানায় ৭০০-র বেশি স্কুলে মহিলা শৌচালয় নেই। আবার ১২০০-রও বেশি স্কুলে পুরুষদের জন্য কোনও শৌচালয় নেই। কেন্দ্রীয় রিপোর্ট অনুসারে, মোট স্কুলের মধ্যে ৭.১৪ শতাংশ স্কুলেই অর্থাৎ ১ লাখের বেশি স্কুলে মহিলাদের ব্যবহারযোগ্য শৌচালয় নেই। এমনকি হরিয়ানার ১৪৬টি স্কুলে এখনও বিদ্যুৎ নেই।