প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: দীর্ঘ বছর ধরে রাজ্যের সরকারি হাসপাতলের চিকিৎসক ও নার্সদের ব্যবহার নিয়ে বরাবরই নেতিবাচক মন্তব্য করে এসেছে রোগীর পরিবারেরা। সামান্য কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলেই নার্সদের দাঁতখিচুনি দেখতে হয় বরাবর। শুধু তাই নয় মাঝে মধ্যে কড়া ধমকও খেতে হয় বলে অভিযোগ রোগী এবং তার পরিবারের সদস্যদের। বারবার এই বিষয়ে অভিযোগ জানানো হলেও কোনো কিছুতেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় না। তাই এবার দীর্ঘদিন ধরে নার্সদের এই অত্যাচার সহ্য করার পরে অবশেষে নার্সদের সোজা পথে আনতে কড়া পদক্ষেপের পথে হাঁটলেন স্বাস্থ্য দফতর। এবং রাজ্যের নার্সদের আচরণ নিয়ে এক নির্দেশিকার মাধ্যমে কড়া বার্তা দিল স্বাস্থ্যভবন।
নির্দেশিকায় কড়া বার্তা নার্সদের!
সূত্রের খবর, গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যভবনের তরফ থেকে এক নির্দেশিকা জারি করা হয়। এবং সেই নির্দেশিকায় রীতিমত রাজ্যের সকল সরকারি হাসপাতালের নার্সিং কর্মীদের সতর্ক করে স্বাস্থ্যভবন। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে যে স্বাস্থ্য পরিষেবার অন্যতম শক্তিশালী স্তম্ভ হল নার্সরা। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গলের নামে শপথ নিয়ে নার্স হতে হয়। তাই তাঁদের সেক্ষেত্রে চারটি বিষয় সব সময় মনে রাখা উচিত। আর এই চার আচরণ হল ভাল আচরণ, সহানুভূতিশীল ব্যবহার, নমনীয় কথাবার্তা এবং রোগীর শুশ্রূষায় নিজেকে উৎসর্গ করে শৃঙ্খলা রক্ষা করা।
কী বলা হয়েছে নির্দেশিকায়?
কিন্তু এবার নার্সদের সেই চার আচরণে খানিক বিক্ষুব্ধ হল স্বাস্থ্যভবন। ওই নির্দেশিকায় স্পষ্ট জানানো হয়েছে যে, সরকারি হাসপাতালগুলিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে রোগীদের সেবা করার সময় নার্সরা ঠিক মতো আচরণ করছেন না। এমনকি তাঁদের আচরণে সহানুভূতিও বেশ একটা চোখে পড়ছে না। তাই বলা হয়েছে, নার্স এবং নার্সিং প্রশিক্ষকদের যত্ন নিয়ে রোগীর দেখভাল অবশ্যই করতে হবে। তাঁদের গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে।
আরও পড়ুনঃ সকাল সকাল ৫ শহরে ১০০-র নীচে নামল পেট্রলের দাম, ডিজেলের দর কত? জানুন আজকের রেট
তবে সেই নির্দেশিকায় এটাও স্পষ্ট বলা হয়েছে যে নার্সদের অবশ্যই রোগীদের আবেগের বিষয়টিকে মানবিকতার সঙ্গে দেখতে হবে। এবং সেক্ষেত্রে যেন নার্সিং প্রশাসনও সজাগ থাকে। এই বিষয়ে যদি কোনো বড় অভিযোগ আসে তাহলে কড়া পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে স্বাস্থ্যভবন। যার ফলে খানিক বিক্ষুব্ধ হয়েছে নার্স সংগঠন। অর্থাৎ স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশিকা যে নার্স সংগঠনের ক্ষেত্রে খুব কাজে আসল না তা তাঁদের বক্তব্যের মাধ্যমেই বুঝিয়ে দিল।
নার্স সংগঠনের বক্তব্য
এদিন স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশিকায় ভিত্তিতে নার্স সংগঠনের বক্তব্য, ‘নার্সদের জন্য এমন নির্দেশিকার কোনো প্রয়োজন ছিল না। অন্যদিকে নার্সেস ইউনিটি’-র পক্ষ থেকে ভাস্বতী মজুমদার জানিয়েছেন যে রাজ্যে রোগী পরিষেবা পিছিয়ে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। সেক্ষেত্রে কোনো ভাবেই নার্সেরা দায়ী নন। সুতরাং ব্যবহারের কথা তুলে রোগীদের কাছে নার্সদের গ্রহণযোগ্যতা কমিয়ে দিলেও, রোগী পরিষেবার তাতে কিছুই উন্নতি হবে না। এছাড়াও তিনি বলেন “যাঁরা বলছেন ব্যবহার ঠিক করতে, আমরা স্বাস্থ্যভবনে তাঁদের কাছে গেলে ঠিক কী ব্যবহার পেয়ে ফিরে আসি, তা ভিডিয়ো করে রেখে সংবাদ মাধ্যমে দেখালে যে কতটা লজ্জার হবে তা কল্পনার বাইরে। তাই এ সব নির্দেশিকা দিয়ে জানানোর কিছু নেই।”
আরও পড়ুনঃ ‘ঋণে জর্জরিত পশ্চিমবঙ্গ সরকার’, কেন DA বাড়ছে না বাংলার কর্মীদের! জানা গেল কারণ
এদিকে গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং সেই বৈঠকে উঠে আসে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্যালাইন-কাণ্ডের ঘটনা। সেখানে গোটা ঘটনার জন্য সরাসরি চিকিৎসকদের দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর এই ঘটনায় ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ডও করেছে স্বাস্থ্য দফতর। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, চিকিৎসকেরা সঠিকভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করলে এক প্রসূতি এবং এক শিশুকে মরতে হত না।