দুর্ঘটনায় হারান হাঁটার ক্ষমতা, হুইলচেয়ারে করেই কলকাতায় ফুড ডেলিভারি করেন শুভাশিস

Published:

Shubhashis Mondal Zomato Delivery Boy
Follow

সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: ‘ইচ্ছাশক্তি থাকলে পথ মিলবেই।’ এই প্রবাদটিকে যেন বাস্তবে রূপ দিয়েছেন ২৭ বছর বয়সী শুভাশিস মণ্ডল (Shubhashis Mondal)। কলকাতার রাস্তায় একটি মোটরচালিত হুইল চেয়ারে করে খাবার ডেলিভারি করেন তিনি। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। হুইল চেয়ারে করে খাবার ডেলিভারি করেন, যা শুধুমাত্র তার জীবিকার উপায় নয়, বরং সমাজের জন্য এক অনুপ্রেরণা।

একটি দুর্ঘটনা বদলে দেয় তার জীবন

২০১৮ সালে বাঁকুড়ার একটি কারখানায় কাজ করত শুভাশিস। সেই সময় ভয়াবহ এক দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। তার মেরুদন্ড গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে তিনি হাঁটার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলেন। দুর্গাপুরে মেরুদন্ডের অস্ত্রোপচার এবং ভেলোরে দীর্ঘ চিকিৎসা করানো হলেও তার অবস্থার কোন রকম উন্নতি হয়নি। কয়েক বছর বিছানায় বন্দী হয়ে জীবন কাটানোর পর এবার নিজের ভাগ্যের চাকা নিজেই ঘুরিয়ে দিলেন শুভাশিস।

Zomato ডেলিভারির নতুন যাত্রা

২০২৫ সালে এসে শুভাশিস মন্ডল এখন একজন Zomato ডেলিভারি পার্টনার। প্রতিদিন সকালে লাল রঙের Zomato টি-শার্ট পড়ে নিজের মোটরচলিত হুইল চেয়ারে চেপে কলকাতার ওলিগলিতে এখন খাবার ডেলিভারি করেন তিনি। “আমি ২০ বছর বয়সে দুর্ঘটনার কবলে পড়ি। তারপর থেকে আর হাঁটতে পারিনি।” কলকাতার বেহালায় হাজী সাহেব রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে পরবর্তী অর্ডারের জন্য অপেক্ষা করার সময় এমন কথা বলেছেন শুভাশিস।

বন্ধুদের ভালোবাসা এবং সহযোগিতা

একজন কৃষকের ছেলে শুভাশিস মণ্ডল। তিনি বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেই মানুষটিকে যেন নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছিল তার বন্ধুরা। তার কথায়, “এই হুইল চেয়ারটি আমার বন্ধুরা আমাকে উপহার দিয়েছে। ওদের সাহায্য ছাড়া আজ আমি সম্মানজনক জীবন ফিরে পেতাম না।” এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, শুভাশিস দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। তার এই বিশেষ হুইলচেয়ারটি IIT মাদ্রাজের কিছু শিক্ষার্থী ডিজাইন করেছিল, যা তাকে নির্বিঘ্নে রাস্তায় চলতে সাহায্য করে।

খেলাধুলার প্রতি ভালোবাসা

শুধুমাত্র ডেলিভারি বয়ের কাজ নয়, শুভাশিস মন্ডল একজন অসাধারণ অ্যাথলেটিক্স। তিনি সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রে অনুষ্ঠিত বিশেষভাবে সক্ষমদের জাতীয় রাগবি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া আগামী ১৬ই মার্চ কলকাতায় আয়োজিত হুইল চেয়ারের ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চলেছেন তিনি। তার কথায়, “আমি Zomato-তে তিন মাস ধরে কাজ করছি। এই সময়ের মধ্যে আমার কলকাতার ট্র্যাফিকে চলার বেশ অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে।”

নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা অমূল্য

কলকাতার বেহালার বাসিন্দা শুভাশিস ফুটবলও ভালবাসেন। নিয়মিত শরীরচর্চা করেন এবং জীবনকে উপভোগ করেন। তিনি বলেছেন, “আমি জানি, আমি হয়তো আর কোনদিন হাঁটতে পারবো না। কিন্তু সেটা আমাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আয় করার ক্ষমতা সত্যিই অমূল্য।” Zomato-তে কাজ করে প্রতিদিন তিনি ঘরে ১০টি করে অর্ডার ডেলিভারি করেন এবং দিনে প্রায় ৫০০ টাকা উপার্জন করেন। তার শিফট শুরু হয় সকাল ৭ টা থেকে ১১ টা এবং সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত।

আরও পড়ুনঃ মেট্রো অতীত, এবার কলকাতায় গঙ্গার নিচে দিয়ে ছুটবে বাস-ট্রাক! তৈরী নকশা

তিনি বলেছেন, “অনেকে আমার ছবি তুলতে চায়। কেউ কেউ আমার গল্প শুনতে চায়। কলকাতার মানুষ আমায় প্রচুর ভালবাসা এবং সম্মান দিয়েছে।” শুভাশিসের এই অনুপ্রেরণামূলক গল্প এবং সংগ্রামী জীবন আমাদের শেখায় যে, কঠিন পরিস্থিতিতে হার না মানলে জীবন ঠিক নতুন পথ খুঁজে দেয়। তার সাহস এবং আত্মনির্ভরশীলতা সত্যিই প্রতিটি মানুষকে অনুপ্রেরণা যোগাবে।

গুরুত্বপূর্ণ
Join
চাকরির খবর
Join
রাশিফল
Join
খেলার খবর
Join