শ্বেতা মিত্র, কলকাতাঃ কেন্দ্রীয় বাজেট শুরু হতে আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই কাউন্টডাউন অবধি শুরু হয়ে দিয়েছেন সকলে। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ দেশবাসী, সকলেরই তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে এই বাজেটের ওপর। বিশেষ করে সেইসকল কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীরা দীর্ঘদিন ধরে করোনাকালে আটকে থাকা ১৮ মাসের বকেয়া ডিএ/ডিআর মিটিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন তাঁরা সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয় সেদিকে নজর রয়েছে সকলের। প্রশ্ন উঠছে, সরকার কি টাকা মেটাবে?
১৮ মাসের বকেয়া মেটাবে কেন্দ্র?
কেন্দ্রীয় সরকার সংসদে স্বীকার করেছে যে বকেয়া ডিএ (Dearness Allowance) দেওয়ার জন্য অনেক কর্মচারী সংগঠনের কাছ থেকে আবেদন এসেছে। তবে এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দেওয়ার পরিবর্তে সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বকেয়া মহার্ঘ ভাতা দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকার তার কর্মচারীদের ৩৪ হাজার কোটি টাকার বেশি ডিএ/ডিআর দেবে না।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক ঘাটতি এফআরবিএম আইনে নির্দেশিত স্তরের দ্বিগুণেরও বেশি। এ অবস্থায় বকেয়া DA/DR দেওয়া সম্ভব নয়।” ন্যাশনাল জয়েন্ট কাউন্সিল অফ অ্যাকশনের (এনজেসিএ) সিনিয়র সদস্য এবং অল ইন্ডিয়া ডিফেন্স এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের (এআইডিইএফ) সাধারণ সম্পাদক সি শ্রীকুমারের মতে, করোনাকালীন সময়ে আটকে থাকা ১৮ মাসের ডিএ / ডিআর প্রদানের লড়াইও চলছে।
আলোচনা চলছে
১৮ মাসের বকেয়া ডিএ মেটাতে ইতিমধ্যেই মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দিয়েছে ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ স্টাফ সাইড (জেসিএম)। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রকে একটি রিপ্রেজেন্টেশনও করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কথাও উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তা সত্ত্বেও সরকার সেদিকে নজর দিচ্ছে না। সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে যে এই জাতীয় ক্ষেত্রে কর্মচারীকে ৬ শতাংশ সুদসহ তা দিতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকার করোনার সময়কালে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ১৮ মাসের জন্য মহার্ঘ ভাতা এবং মহার্ঘ ত্রাণের ৩ কিস্তি আটকে রেখেছিল। সেই সময় সরকারের তরফে বলা হয়েছিল, অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয়।
আরও পড়ুনঃ সবারই প্রয়োজন, মাত্র ২০ হাজারে শুরু করুন সবথেকে চাহিদার ব্যবসা! মাসে আয় হবে ১ লাখ
শ্রীকুমারের কথায়, “সরকারের মনে একটা বিভ্রান্তিকর অবস্থা তৈরি হয়েছে। ২০২০ সালের গোড়ার দিকে, কেন্দ্র কোভিড -১৯ এর আড়ালে সরকারী কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের ডিএ / ডিআর স্থগিত রেখেছিল। সেই সময় কেন্দ্রীয় সরকার কর্মচারীদের ১১ শতাংশ ডিএ প্রদান বন্ধ করে কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় করেছিল। এরপর ১৮ মাসের বকেয়া মেটানোর বিষয়ে সরকারকে বিভিন্ন বিকল্প প্রস্তাব দেন কর্মচারী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এর মধ্যে এককালীন বকেয়া পরিশোধ অন্তর্ভুক্ত ছিল। অ্যালায়েন্স অফ অল এক্স প্যারামিলিটারি ফোর্সেস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে এই মর্মে ই-মেল পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণকে। বাজেটে আধা সামরিক বাহিনীতে পুরনো পেনশন পুনর্বহাল করার আর্জি জানানো হয়েছে। ডিএ/ডিআর বকেয়া, ৩৪,৪০২.৩২ কোটি টাকা ফেরত দিতে হবে।”
আরও পড়ুনঃ লক্ষ লক্ষ কর্মীদের জন্য সুখবর, পেনশন নিয়ে নয়া বিজ্ঞপ্তি জারি সরকারের
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তাঁর ই-মেলে লিখেছেন, “কেন্দ্রীয় কর্মচারী এবং সীমান্ত কনস্টেবলদের বকেয়া ডিএ / ডিআর প্রদান করা উচিত।” এছাড়া কনফেডারেশন অফ সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ অ্যান্ড ওয়ার্কার্স এর সাধারণ সম্পাদক এসবি যাদব বলেন, “বকেয়া ডিএ/ডিআর মেটানোর জন্য সরকারকে বহুবার চিঠি লেখা হয়েছে। সরকারি চাকরি কোনো চুক্তি নয়। এটা একটা পরিস্থিতি। শ্রমিকরা সরকারের কাছে ন্যায্য আচরণ প্রত্যাশা করে। রাজ্যগুলিকে পরিষেবার ক্ষেত্রে রোল মডেলের ভূমিকা পালন করতে হবে। এতে কর্মীরা উৎসাহের সঙ্গে কাজ করতে পারেন।”
কী বলছেন আধিকারিকরা?
ন্যাশনাল মিশন ফর ওল্ড পেনশন স্কিম ইন্ডিয়ার সভাপতি মনজিৎ সিং প্যাটেল বলেন, ‘১৮ মাসের বকেয়া ডিএ বা ডিআর কর্মীদের অধিকার। সরকারের উচিত অবিলম্বে এই টাকা ছাড় করা। এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে এই অর্থ ছাড় করা যাবে এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। সরকার বরাবরই তা অস্বীকার করেছে। গত বছর রাজ্যসভাতেও বকেয়া টাকা দিতে অস্বীকার করেছিল সরকার। এখন আমাদের ফোকাস অষ্টম বেতন কমিশনের উপর আমাদের সুপারিশ / পরামর্শ প্রণয়ন এবং ওপিএসের সমস্ত সুবিধা পুনরুদ্ধার করা।’