শ্বেতা মিত্রঃ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের নভেম্বর মাসেই পদ্মা রেল সেতুর ওপর দিয়ে যশোর অব্দি ট্রেন ছুটতে দেখা যাবে। এই নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে উত্তেজনা শেষ নেই। কিন্তু তারই মাঝে চিনের তরফে এমন এক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যার পরে বাংলাদেশের মাথায় রীতিমতো চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। কয়েকদিন আগেই চিনের বিদেশ মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী মোঃ ইউনূস। কিন্তু তারপরেও বিতর্ক যেন নতুন করে সৃষ্টি হল। আসলে জানা গিয়েছে, যেহেতু বিল পরিশোধের সময়সীমা বাড়াতে নারাজ চিন, তাই এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে পদ্মা সেতু রেল।
চ্যালেঞ্জের মুখে পদ্মা সেতু রেল!
এখন নিশ্চয় ভাবছেন যে কী হয়েছে? তাহলে বিশদে জানতে চোখ রাখুন আজকের এই লেখাটির উপর। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় নির্মিত দেশের বৃহত্তম অবকাঠামো প্রকল্প ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু রেল সংযোগ উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা মুন্সীগঞ্জের মাওয়া রেলস্টেশন থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে যশোরের মধ্যে রেলপথের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের উদ্বোধন করেন। তবে এখন আর শেখ হাসিনা সরকার নেই। বাংলাদেশে বর্তমানে গঠিত হয়েছে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার আর এই অন্তর্ভুক্তির সরকারের কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হলো চিনের ঋণ পরিশোধ করা।
পদ্মা সেতু রেল নিয়ে চিনের ঋণ আদৌ আগামী দিনে বাংলাদেশ শোধ করতে পারবে কিনা সেই নিয়ে জোরালো প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জানা গিয়েছে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য চিনকে ঋণ পরিশোধের শেষ সময় হল ২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর। এদিকে প্রকল্পের অনেক কাজ এখনো অবধি অসম্পূর্ণ। যদিও চিন সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, পরিশোধের মেয়াদ বাড়াবে না। সরি স্বাভাবিকভাবে মহা বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ।
সময় দিতে নারাজ চিন
বাংলাদেশ রেলওয়ে বিল পরিশোধের জন্য আরও ছয় মাস সময় চেয়েছে। যদিও সেই বিষয়ে কর্ণপাত করতে নারাজ চিন। এদিকে বাংলাদেশ রেল সূত্রে খবর, প্রকল্পের ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি বাজেটের আওতায় ‘প্রভিশনাল সাম’ ও ‘প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট’ খাতের সঞ্চয় কাজে লাগানোর অনুরোধ জানিয়ে চিনের এক্সিম ব্যাংকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে এখনও কোনও অনুমোদন পাওয়া যায়নি।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ৩ মে অনুমোদন করা হয়। সে সময় এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ২২ মে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। ২০২৪ সালে জুলাই মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তার দিনে দিনে সময়টা বেড়েই চলেছে। শুধু তাই নয় সময় আর পাশাপাশি টাকার সংখ্যাটাও বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশ আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে এই কাজ শেষ করা প্রতিশ্রুতি দিল চীন আর ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর প্রতি আমল দিচ্ছে না। ফলে এই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা আগামী দিনের না বাড়ালে বাংলাদেশের রেল সেতুর কাজ অনেকটাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রিপোর্টে চাঞ্চল্য
সাম্প্রতিক সময়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশে এসেছে। আর এই রিপোর্ট দেখে চমকে গিয়েছেন সকলেই। রিপোর্ট অনুযায়ী, আগস্ট-২০২৪ পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ৩৩ হাজার ৭৪৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি টাকা ১৪ হাজার ৮৩৪ কোটি ১৯ লাখ এবং চিনা ঋণ ১৮ হাজার ৯১০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আগস্ট-২০২৪ পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৯৬ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮৫.৯৮ শতাংশ। লোন অ্যাভেইলিবিলিটি পিরিয়ড ১৭ নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত। ঢাকা-মাওয়া অংশে ৯৭ দশমিক ৫৫ ও মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৯. ৫০ শতাংশ। নভেম্বরের পর চিনের তরফে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এখন সেদিকে তাকিয়ে রয়েছেন সকলে।