প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: যত দিন যাচ্ছে বাংলাদেশে (Bangladesh) একের পর এক সংকট দেখা দিচ্ছে। কখনও বিদ্যুৎ বিভ্রাট, তো আবার কখনও সবজি বিভ্রাট। প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম যেই হারে বাড়ছে তাতে রীতিমত কিছু কিনতে গেলেই ভয়ে হাঁটু কাপছে সকলের। যার মধ্যে অন্যতম হল আলু। জানা গিয়েছে আলুর দাম যেন সোনার দামের সমান হয়ে গিয়েছে। শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর বাজারে বর্তমানে এক কেজি আলু প্রায় বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। যেখানে ১৫ দিন আগে আলুর দাম ছিল ৫৫-৬০ টাকা। সেখানে ক্রমেই এই কদিনে প্রায় ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে গিয়েছে।
আসলে আলু যেহেতু মাটির নিচে চাষ হয় তাই সাধারণ তাপমাত্রায় বেশিদিন ভালো থাকে না, তাই হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়। সাধারণত নভেম্বরের প্রথম দিকে নতুন আলু বাজারে আসতে শুরু করে, এবং ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু এবারে ফলন তেমন না হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে ক্রেতা সহ বিক্রেতারা।
দাম বাড়ায় কী বলছেন ব্যবসায়ীরা?
এইভাবে দিনের পর দিন দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের আলু ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, “বর্তমানে হিমাগারে জমে থাকা আলুর সরবরাহ প্রায় শেষের দিকে। যার ফলে পাইকারি বিক্রেতারা চাহিদা অনুসারে আলুর ঠিকঠাক সরবরাহ পাচ্ছেন না। অন্যদিকে আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আলু চাষের ফলন কমেছে। আবার গত মাসে অর্থাৎ অক্টোবর মাসে অতিবৃষ্টির কারণে আলুর বীজ রোপণে দেরি করেছেন কৃষকেরা। এতে বাজারে আগাম আলু আসতে দেরি হচ্ছে। এই সব কারণে আলুর দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে গিয়েছে।”
সরকারি তথ্যে গরমিল
এদিকে সরকারি তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে আলুর দাম ছিল ৪৫-৫০ টাকা, কিন্তু এখন তা ৬৫-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক বছরে দাম বেড়েছে ৪৭ শতাংশ। যদিও আলু উৎপাদনের তথ্য নিয়ে নানা তর্ক বিতর্ক উঠছে। অনেকের মতে এই পরিসংখ্যানের হিসেবে নানা গরমিল রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে- দেশে আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টন, তবে হিমাগার মালিকদের দাবি, উৎপাদন হয়েছে ৭০-৭৫ লাখ টন। অর্থাৎ ১০-১৫ লাখ টন আলুর ঘাটতি রয়েছে। আর তার ফলেই চাহিদার পরিমাণ ঊর্ধ্বমুখী।
আর এই সমস্যা মেটানোর জন্য স্থানীয় বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে গত সেপ্টেম্বর মাসে আলুর আমদানি শুল্ক কমানোর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ সরকার। সেই অনুযায়ী গত ৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এক প্রজ্ঞাপনে আলুর আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করে। পাশাপাশি আলু আমদানিতে থাকা ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। আশা করা হয়েছিল, এর মাধ্যমে বাজারে আলুর দাম অনেকটাই মধ্য এবং নিম্নবিত্তদের হাতের নাগালে আসবে। কিন্তু আখেরে বাস্তবে সেই চিত্র উল্টো হল।