সৌভিক মুখার্জী, কলকাতা: গতকাল অক্ষয় তৃতীয়ার শুভ লগ্ন পেরল। আর সোনা কেনার শুভ সময় বলে অনেকেই মেনে আসে অক্ষয় তৃতীয়াকে। আর এই দিনটি বহু ভারতীয়ের কাছে অর্থনৈতিক শুভ সূচনার দিন। কিন্তু শুধু কি ব্যক্তিগত সোনা কেনাকাটায় সীমাবদ্ধ এই দিনটি? মোটেই না! এখন এই মূল্যবান ধাতুটি হয়ে উঠেছে বিশ্বের অর্থনীতির সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির কাছে।
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে সোনা সেভ হ্যাভেন
কোভিড 19 মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন, এমনকি সম্প্রতি আমেরিকা ও চীনের শুল্কযুদ্ধ, সবকিছুর মিলে বিশ্ব অর্থনীতিকে একেবারে টালমাটাল অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আর এহেন পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে সোনার চাহিদা ও দাম হু হু করে বাড়ছে। কারন সোনা শুধুমাত্র গয়নার জন্য নয়, এখন সাধারণ মানুষের কাছে নিরাপদ বিনিয়োগের বিকল্পও বটে।
আর এই সূত্র ধরে অনিশ্চিত সময়ে সোনাকে সেভ হ্যাভেন বা নিরাপদ সম্পদ বলেই আখ্যা দিচ্ছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি। এর জেরে সোনার মজুদ বাড়ানোর জন্যে এক্কেবারে উঠেপড়ে লেগেছে অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। ভারতও এবার সেই রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করলো।
RBI-এর রেকর্ড সোনা মজুদ | RBI Gold Reserve |
সূত্র বলছে, 2024-25 অর্থবছরে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক 57.5 টন সোনা কিনেছে, যা 2016 সালের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আর গত বছর সোনার মজুদ 653 টন থেকে বেড়ে 880 টনে পৌঁছে গিয়েছে, যা প্রায় একধাক্কায় 35 শতাংশ বেশি।
আর এই বৃদ্ধির জেরে ভারত এখন গোটা বিশ্বের মধ্যে সপ্তম সর্বোচ্চ সোনা মজুদকারী দেশে পরিণত হয়েছে, যেখানে 2015-তে ছিল দশম স্থানে। শুধু তাই নয়, ভারতের মোট বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের মধ্যে এখন 11.35 শতাংশই সোনা, যেখানে 2021 সালে এই হার ছিল মাত্র 6.86 শতাংশ।
কেন সোনার দিকে ঝুঁকছে RBI?
বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছে, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সোনার দিকে পা বাড়ানোর পিছনে প্রধান কারণ হলো আমেরিকান ডলারের অস্থিরতা। বিগত কয়েক বছর ধরে ডলারের মান একবার উঠছে, তো আর একবার নামছে। আর সেই সূত্র ধরে সোনা স্থিতিশীল থাকাই সোনার দিকে সবার কুনজর পড়েছে।
আরও পড়ুনঃ চালু হবে শিয়ালদহ থেকে আলিপুরদুয়ার বন্দে ভারত এক্সপ্রেস! দেখে নিন রুট ও ভাড়া
রুপির প্রসারেও সোনার ভূমিকা বিরাট!
বেশ কিছু বিশ্লেষক মনে করছে, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সোনার মজুদ বাড়ানোর কৌশল মূলত ভারতের নিজস্ব মুদ্রা রুপির আন্তর্জাতিকীকরণ এবং ইউপিআই ভিত্তিক লেনদেনের প্রক্রিয়াকে আরও বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই কাজ করবে। হ্যাঁ, যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে এবং ডলারের উপর নির্ভরতা কমছে, তখন ভারত এর সুফল ভোগ করতে চাইবে না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।