প্রীতি পোদ্দার, পূর্ব বর্ধমান: গত বছরের ডিসেম্বর থেকে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বাংলার আবাস যোজনার (Bangla Awas Yojana) প্রতিটি গ্রাহককে প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা প্রদান করা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই সেই টাকা দিয়ে ১২ লক্ষ গ্রাহক বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করে দিয়েছে। তবে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য পুরোপুরি বন্ধ করতে কোনো নেতা, মন্ত্রীকে ‘নাক গলাতে’ নিষেধ করেছিলেন। আসলে অতীতের নানা সরকারি প্রকল্পে একের পর এক নানা ঘুষ এবং কাটমানির অভিযোগ উঠে আসায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের উপভোক্তারা যেন নিজেরাই বাড়ি তৈরির কাজটি করেন এবং কোনও মধ্যস্থতাকারীর সহযোগিতা যেন না নেন।
বিডিওদের বড় দায়িত্ব অর্পণ মুখ্যমন্ত্রীর!
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই নির্দেশের পর পরই তাই উপভোক্তাদের বাড়ি তৈরির কাজ শুরুর আগে বিডিওদের নিজ নিজ ব্লকের মার্কেট কমিটি এবং বাড়ি তৈরির উপকরণের বিক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল নবান্ন। কারণ এই সময় অনেক বিক্রেতারা বাড়ি তৈরির সামগ্রী চাহিদা অনুযায়ী দাম বাড়িয়ে দেয়। সেক্ষেত্রে যাতে এই কাজ না হয় তাই সঠিক দামে গুণগত মান বজায় রেখে ইট, বালি, স্টোনচিপ, অ্যাসবেস্টস ইত্যাদি উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল প্রতিটি এলাকার বিডিওদের। কিন্তু এই নির্দেশের মাঝেই ফের বাড়ি তৈরির জন্য আলাদা টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠল সম্প্রতি।
নির্দেশ না মেনেই ডেভেলপমেন্ট ফি নেওয়া হচ্ছে!
ঘটনাটি ঘটেছে, পূর্ব বর্ধমানের মেমারি ১ ব্লকের অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েতে। সেখানে মেমারি ১ ব্লকে মোট ১০ টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। আর সবকটি পঞ্চায়েতই তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে রয়েছে। সূত্রের খবর, সেখানে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে মেমারি ১ ব্লকের প্রায় ৪৫০০ জন সরকারি অনুদান পাচ্ছেন। কিছুদিন আগেই তাঁদের বেশিরভাগ জনের অ্যাকাউন্টে প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা ঢুকে গিয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠছে, অনুদান পেয়ে যাঁরা বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করছেন, তাঁদের কাছ থেকেই নাকি ব্লকের বেশিরভাগ পঞ্চায়েত ‘ডেভেলপমেন্ট ফি’ নিচ্ছে। রীতিমত মাইকে প্রচার করে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে ‘বাংলার বাড়ি’ তৈরির সময় ‘ডেভেলপমেন্ট ফি’ অবশ্যই দিতে হবে।
কেন এই ডেভেলপমেন্ট ফি নেওয়া হচ্ছে?
জানা গিয়েছে ‘ডেভেলপমেন্ট ফি’ বাবদ তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত ওই পঞ্চায়েতগুলি ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের সরকারি অনুদান-প্রাপকদের কাছ থেকে কখনও ৫০০ তো আবার কখনও ১০০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে এই ঘটনা জানাজানি হতেই নড়েচড়ে বসেছে ব্লক ও জেলা প্রশাসন। এবং গোটা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক আয়েষা রানি। ঘটনার কথা স্বীকার করে মেমারি ১ ব্লকের নিমো ২ পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান শেখ আব্দুল রহমান জানিয়েছে যে সকল গ্রাহকরা বাংলার বাড়ি প্রকল্পের অনুদানকে কাজে লাগিয়ে ’বড় বাড়ি’ তৈরি করছেন, একমাত্র তাঁদের কাছ থেকেই ‘ডেভেলপমেন্ট ফি’ নেওয়া হয়েছে। তবে যাঁরা ‘বাংলার বাড়ির’ মডেল অনুযায়ী বাড়ি করছেন, তাঁদের কাছ থেকে কোনও টাকা নেওয়া হচ্ছে না।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের দিক থেকে ভারতে আনা হচ্ছে ৬টি গ্রাম, আচমকাই বড় পদক্ষেপ নিচ্ছে BSF
এদিকে মেমারির তৃণমূল বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা করেন। তিনি এই প্রসঙ্গে জানান, ডেভেলপমেন্ট ফি নেওয়া তো দূরের কথা, বাংলার বাড়ি প্রকল্পে পঞ্চায়েতের নাক গলানোয় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেক্ষেত্রে কীভাবে দলের লোক হয়ে দলনেত্রী তথ্য মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ অমান্য করে পঞ্চায়েত প্রাপকদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। তাই তিনি বিষয়টি জানার পরই বিডিও-কে তদন্ত করে দেখার জন্য আবেদন জানিয়েছেন।
সুপারস্টার কালচার শেষ করতে চান গম্ভীর? অভিযোগ উঠতেই ডানা ছাঁটার প্রস্তুতি BCCI-র