বিক্রম ব্যানার্জী, ব্যারাকপুর: কথায় বলে, ইচ্ছে থাকলে সব হয়। এবার সেই লোকনিরুক্তিকেই সত্যি করে দেখালেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক সিভিক ভলান্টিয়ার। পেশায় তিনি আইন রক্ষাকারীদের একজন সহযোগী। তবে নিজের পেশার পাশাপাশি শিল্পী সত্তাটাকেও বাঁচিয়ে রেখেছেন চিত্রশিল্পী প্রীতম বিশ্বাস (Civic Volunteer Pritam Biswas)। তাঁর হাত ধরেই নিজেদের স্বপ্ন বুনছেন বহু ছেলে মেয়ে।
নানান চরিত্রে সিভিক ভলান্টিয়ার প্রীতম বিশ্বাস
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে প্রতিদিন নিজের দায়িত্ব পালন করেন প্রীতম। টানা 9টা 6টার ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফিরে একদন্ড বিশ্রামের সুযোগ নেই তাঁর। কারণ, শিল্পী সত্তাটাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে তো। তাই, কাজ সেরে বাড়ি ফিরেই একেবারে অন্য চরিত্রে ঢুকে পড়েন সিভিক ভলেন্টিয়ার প্রীতম।
এক ভিডিও সূত্রে খবর, ক্লাস ওয়ান থেকেই আঁকাআঁকি শুরু করেছিলেন ব্যারাকপুরের এই চিত্রশিল্পী। ছেলেবেলা থেকেই শিল্প কর্মের প্রতি একটা আলাদা আকর্ষণ ছিল তাঁর। সেই থেকেই আঁকা শেখা এবং পরবর্তীতে ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়া। আর্ট কলেজ থেকে নিজের প্রতিভাকে শান দিয়ে বেড়ানোর পরই সর্বভারতীয় সংগীত ও সংস্কৃত পরিষদের একজন রেজিস্টার্ড টিচার হিসেবে কাজ শুরু করেন প্রীতম। সেই থেকেই আলাদাভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের আঁকা শেখানোর রাস্তা প্রশস্ত হয় প্রীতমের।
ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের কথায়, ‘পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার হলেও বর্তমানে চিত্রশিল্পের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আমি। এই মুহূর্তে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথেও জুড়ে রয়েছি। তাদের দৌলতেই আমার ছাত্র-ছাত্রীরা আন্তর্জাতিক স্তরের বিভিন্ন আর্ট কম্পিটিশনে অংশ নিতে পারছে।’ তবে প্রতিযোগিতায় শুধুই অংশ নেয়নি প্রীতমের ছাত্র-ছাত্রীরা। সেখান থেকে বহু পুরস্কারও জিতে এসেছেন ব্যারাকপুরের ওই চিত্রশিল্পীর শিষ্যরা।
আদর্শ শিক্ষকের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে প্রীতমের এক ছাত্র বলেন, ‘স্যার ছিল বলেই আজ আমরা সবাই এত সুন্দর আঁকতে শিখেছি। একটা সময় ছিল আমি কিছুই পারতাম না। তবে স্যার সময় নিয়ে আমাকে ধরে ধরে শিখিয়েছে। তাঁর কাছে আমরা সকলেই কৃতজ্ঞ।’ জানা যায়, প্রীতমের হাত ধরে আঁকা শিখে তাঁর ছাত্রছাত্রীরা কেউ তিনবার কেউ আবার চার বারও রাশিয়া থেকে পুরস্কার জিতে এসেছেন। সব মিলিয়ে, একজন সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে আইন রক্ষা করতে তিনি যেমন সিদ্ধহস্ত, ঠিক তেমনই কাজের শেষে প্রীতমের ভূমিকা অনেক। একজন চিত্রশিল্পী হওয়ার পাশাপাশি বহু খুদের পছন্দের শিক্ষক বলা ভাল, পথপ্রদর্শক প্রীতম।
অবশ্যই পড়ুন: দিল্লি টেস্টের শুরুতেই সেঞ্চুরি, সচিনের পর প্রথম ভারতীয় হিসেবে বড় রেকর্ড যশস্বীর!
কাজের পাশাপাশি কীভাবে নিজের ছাত্র-ছাত্রীদের সময় দেন প্রীতম?
একজন সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে দায়িত্ব অনেক। তারপরেও কীভাবে নিজের শিল্পী সত্তাটাকে বাজিয়ে রেখেছেন? সর্বোপরি কীভাবে এত কাজের পরও নিজের ছাত্র-ছাত্রীদের সময় দেন প্রীতম? উত্তরে ব্যারাকপুরের ওই সিভিক জানিয়েছেন, ‘আমি যেখানে কাজ করি অর্থাৎ ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্তারা আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। স্যারেরা সাহায্য না করলে আমি হয়তো কাজের পাশাপাশি নিজের শিল্পী সত্তাটাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারতাম না!’ এও জানা গিয়েছে, ছাত্র-ছাত্রীদের নানান কম্পিটিশন সহ আঁকাআঁকির ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রয়োজনীয় সময়েও প্রীতমকে ছাড় দেন অফিসাররা। তাঁর দাবি, ‘এখান থেকে অনেক সাহায্য পাই। আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ।’
#ব্যারাকপুর_পুলিশ_কমিশনারেটে #barrackpore_police_commissionerate #with_you_by_your_side #আপনার_সাথে_আপনার_পাশে
Posted by Barrackpore Police Commissionerate on Thursday, October 9, 2025