প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: গত ৩০ এপ্রিল পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে গরমের ছুটি (Summer Vacation 2025) পড়ে গিয়েছে। তাই সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী এখন রাজ্যের প্রতিটি সরকারি বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে। যার ফলে পঠনপাঠনও বন্ধ। তবে সমস্ত বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও পূর্ব বর্ধমানের এই বিদ্যালয় নিয়ম করেই খোলা হচ্ছে। বন্ধ হয়নি পঠনপাঠন। নিয়ম করে স্কুলে আসছেন শিক্ষকরাও। কিন্তু কেন স্কুল কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যোগ? তা প্রকাশ্যে আসতেই এবার প্রশংসার ঝড় উঠল।
ঘটনাটি কী?
জানা গিয়েছে শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে বর্ধমানের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তরফে নেওয়া হয়েছে অভিনব উদ্যোগ। প্রত্যেক সপ্তাহে রবিবার বাদে নিয়ম করে প্রতিদিন খোলা হচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী ১ ব্লকের জাহান্নগর জিএসএফপি বিদ্যালয়। একাধিক পড়ুয়াদের একইভাবে শিক্ষাদান করছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা। এমনকি নিজেদের জমানো টাকা খরচ করে পড়ুয়াদের জন্য খবরের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
কী বলছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক?
এই প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমরেশ দেবনাথ জানিয়েছেন যে, ‘বিদ্যালয় ছুটির আগে অভিভাবকদের নিয়ে মিটিং করা হয়েছিল। মূল বিষয় ছিল গরমের ছুটির মধ্যেই পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া। তাই পড়ুয়াদের জন্য আমাদের এই উদ্যোগ। প্রতিদিন সকালে দেড় ঘণ্টা করে ৮:৩০ থেকে ১০ পর্যন্ত ক্লাস করানো হচ্ছে।’ আসলে গরমের ছুটি শুরু হওয়ার আগে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে আবেদন করেছিল যাতে কিছুক্ষণ করে প্রতিদিন তাঁদের ছেলেমেয়েদের পড়ানোর জন্য। সেই প্রস্তাবেই এবার সম্মতি দিল বিদ্যালয়। বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক, কম্পিউটার এবং আঁকার ক্লাস করানো হচ্ছে।
কবে কবে খোলা থাকছে স্কুল?
জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী ১ ব্লকের জাহান্নগর জিএসএফপি বিদ্যালয়ে প্রতি সপ্তাহে সকাল সাড়ে আটটা থেকে সকাল দশটা টা পর্যন্ত সোম, বুধ এবং শুক্রবার করে মোট তিনদিন প্রথম এবং তৃতীয় শ্রেণীর ক্লাস করানো হয়ে থাকে। এবং মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনিবার করে দ্বিতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর ক্লাস করানো হয়। দু’টি ক্লাসের জন্য একদিন দু’জন শিক্ষক আসেন। এবং অন্যদিন অন্য দুই শিক্ষক আসেন। ছুটিতেও ছাত্রছাত্রীদের যাতে পড়াশোনার অভ্যাস বজায় থাকে, তাই এ ধরনের উদ্যোগ। বিদ্যালয়ের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিক। তাঁর মতে, এমন কাজ অন্য স্কুলগুলিকেও উৎসাহ জোগাবে।
অনেক বছর ধরেই চলছে এই প্রথা!
যদিও গরমের ছুটিতে ক্লাস করানো নতুন কোনো ব্যাপার নয় বর্ধমানের এই বিদ্যালয়ে। কারণ এর আগেও ২০১৮ থেকে গ্রীষ্মের ছুটিতে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের জন্য স্কুল খোলা রাখা হয়ে আসছে। ২০১৫ সালে স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ৯৬ জন। নানা ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে অনেকেই স্কুলে আসতে চায় না। এদিকে স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেক পড়ুয়ার অভিভাবকেরা ভোর হতেই খেতমজুরের কাজে বাড়ির বাইরে চলে যান। ছেলেমেয়েদের দেখার কেউ নেই। এদিকে পড়াশোনাতেও পিছিয়ে পড়েছে তাঁরা। তাই তাঁদের জন্য এবার বড় পদক্ষেপ নিল বিদ্যালয়।
আরও পড়ুন: “ সবাই যোগ্য হলেও বাংলায় একমাত্র অযোগ্য ইনি…” নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে বিস্ফোরক শুভেন্দু
পড়ুয়াদের জন্য খাবারের বন্দোবস্ত শিক্ষকদের
এইমুহুর্তে বর্ধমানের এই প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১৯২ জন। জাহান্নগর, পরানপুর, সুলুন্টু গ্রামের পড়ুয়ারা পড়তে আসে এই বিদ্যালয়ে। রয়েছেন পাঁচ জন শিক্ষক, শিক্ষিকা। অঙ্কন এবং কম্পিউটারের জন্য রয়েছেন দু’জন অতিথি শিক্ষক। এদিকে গরমের ছুটিতেও ক্লাস চললেও মিড ডে মিল দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। এদিকে স্কুলে পড়াশোনা করতে আসা পড়ুয়াদের অভুক্ত রাখতে রাজি নন শিক্ষকরা। তাই তাঁরাই চাঁদা তুলে সামান্য কিছু ভেজানো ছোলা এবং শুকনো বিস্কুটের বন্দোবস্ত করেছেন, যাতে ছেলেমেয়েগুলো খালি পেটে, শুকনো মুখে ঘরে না ফেরে।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join Hood Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join Hood Rashifal |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |