প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: প্রতি বছরের মতো এ বারেও শিক্ষক দিবসের দিন ট্যাব কেনার জন্য পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কিন্তু শেষ বেলায় তা পিছিয়ে যায়। তবে পুজোর আগেই এবার টাকা পাঠানো শুরু করে দেয় শিক্ষা দফতর। প্রায় ১৬ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীর ট্যাব কেনার টাকা দিতে শুরু করে সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়াদের। এ বারই প্রথম রাজ্য সরকার একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির সব পড়ুয়াকে এই টাকা দিচ্ছে। কিন্তু এখানেও সাইবার প্রতারকরা হামলা চালায়। লক্ষ লক্ষ টাকা গায়েব করে দিচ্ছে। এবার সেই প্রতারকদের উৎসস্থল মিলল বিহারে!
Taruner Swapna Scheme এর ৪ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা লোপাট
জানা গিয়েছে, কেষ্টপুর দেশপ্রিয় বালিকা বিদ্যামন্দিরের ৪৮ জন ছাত্রীর অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব হয়ে যায় ট্যাব কেনার টাকা। ছাত্রীরা অভিযোগ জানায় যে সাইবার প্রতারকেরা তাদের ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে এই টাকা গায়েব করে দিয়েছে। ৪৮ জন ছাত্রীর ১০ হাজার টাকা করে, অর্থাৎ ৪ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা লোপাট হয়েছে। এই প্রসঙ্গে, ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নাজরিন নাহার জানান, “ তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের টাকা পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে দেওয়ার জন্য নিয়ম অনুযায়ী ‘বাংলার শিক্ষা’ পোর্টালে পড়ুয়াদের নাম, অ্যাকাউন্ট নম্বর, আইএফএসসি কোড আপলোড করা হয়েছিল। এবং সেগুলির প্রিন্ট আউটও নেওয়া হয়। এরপর ছাত্রীদের দেওয়া সকল তথ্য সব ঠিক ভাবে আপলোড হয়েছে কি না তা দেখার জন্য দ্বিতীয় বার আপলোড করে তার প্রিন্ট আউটও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু টাকা ঢোকার পরেই গণ্ডগোল শুরু হয়।”
তিনি আরও বলেন যে, “ টাকা ঢোকার পরে ৪৮ জন ছাত্রী যখন জানায় যে তাদের টাকা ঢোকেনি। তখন দ্বিতীয়বার আপলোড করা প্রিন্ট আউট দেখতে গিয়ে দেখি, ওই ৪৮ জন ছাত্রীর আইএফএসসি কোড একই থাকলেও অ্যাকাউন্ট নম্বর সম্পূর্ণ পাল্টে গিয়েছে। আর ট্যাব কেনার টাকা ওই পাল্টে যাওয়া অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে। পরে ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানা যায় যে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে, সেটি বিহারের কিসানগঞ্জের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক।” এই বিষয়ে সম্পূর্ণ অভিযোগ বিধাননগর সাইবার ক্রাইম বিভাগে মেল করে সরাসরি জানানো হয়েছে।
তথ্য আপলোডের মাধ্যমেই অ্যাকাউন্টে ঢুকছে হ্যাকাররা!
এই বিষয়ে তদন্তকারী অফিসারদের একাংশ আশঙ্কা করছেন যে, শিক্ষকেরা যখন পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্ট নম্বর বাংলা শিক্ষা পোর্টালে ঢুকে দ্বিতীয় বার আপলোড করছিলেন, তখনই হ্যাকাররা পোর্টালে ঢুকে অ্যাকাউন্ট নম্বর পাল্টে দিয়েছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষা দফতরের একাংশ দোষ দিচ্ছে শিক্ষকদের। বারংবার স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে যে অ্যাকাউন্ট নম্বর আপলোডের সময়ে বার বার সচেতন থাকতে হবে যে, আপলোড করার পরে কী-আপলোড করলেন তা বারবার পরীক্ষা করে দেখে নিতে হবে। আর কাজ শেষ হলেই সঙ্গে সঙ্গে লগ আউট করে নতুন পাসওয়ার্ড তৈরি করে নিতে হবে। কিন্তু কোনো শিক্ষকই এই কাজ করছে না।
প্রসঙ্গত, একই ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের ৭০ জন ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে। জানা গিয়েছে বাংলার শিক্ষা পোর্টাল হ্যাক করে অ্যাকাউন্ট নম্বর সরিয়ে নিজেদের অ্যাকাউন্ট নম্বর বসিয়েছে সাইবার প্রতারকরা। প্রায় ৭ লক্ষ টাকা প্রতারকদের অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে।