প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: গতকাল লক্ষ্মীবারেই ধনলাভ হল কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মীদের। দীর্ঘ পরিকল্পনার পর অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও পেনশনভোগীদের ভাতা সংশোধনের জন্য অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। কিন্তু কোন দিন থেকে এই বেতন কমিশন চালু হবে তা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো বিজ্ঞপ্তি বা ঘোষণা করা হয়নি। তবে অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন শীঘ্রই কমিটির চেয়ারম্যান এবং দুইজন সদস্য নিয়োগ করা হবে। এবং ২০২৬ থেকেই চালু হবে এই কমিশন।
চালু হবে অষ্টম বেতন কমিশন
অশ্বিনী বৈষ্ণব এদিন জানিয়েছেন, ‘২০২৬ সালে সপ্তম বেতন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গঠন হবে অষ্টম বেতন কমিশন। এই আবহে ২০২৬ সালের আগেই সেই কমিশনের সুপারিশ পাওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় আমাদের হাতে আছে।’ অন্যদিকে মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন যে, বেতন বৃদ্ধি এবং কমিশন গঠন নিয়ে অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির সাথে পরামর্শ করা হবে। আসলে প্রতি ১০ বছরে একটি করে নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হয়। স্বাধীনতার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ৭টি কেন্দ্রীয় বেতন কমিশন চালু হয়েছে। বহু রাজ্যই কেন্দ্রের মতো সপ্তম বেতন কমিশনের আওতায় বেতন দেয় কর্মীদের। তবে ব্যতিক্রমের তালিকায় এখনও থমকে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।
আরও পড়ুনঃ মহুয়া মৈত্রর সঙ্গে হয়ে গেল খেলা! প্রতারণার শিকার কৃষ্ণনগরের সাংসদ
বর্তমানে যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মীদের কেন্দ্রীয় সরকার সপ্তম বেতন কাঠামো অনুযায়ী ৫৩ শতাংশ হারে ডিএ (Dearness Allowance) প্রদান করছে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ষষ্ঠ বেতন কমিশনের মাধ্যমে মাত্র ১৪ শতাংশ হারে DA প্রদান করছে রাজ্য সরকারী কর্মীদের। এই আবহে দিনের পর দিন কেন্দ্রীয় কর্মীদের সঙ্গে রাজ্যের কর্মচারীদের DA-র ফারাক বেড়েই চলেছে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মীদের মুখে চওড়া হাসি দেখা গেলেও বাংলার সরকারী কর্মীদের মুখ পরিণত হয়েছে বাংলার পাঁচে। তাই এবার সেই নিয়ে মুখ খুললেন কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ এর সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায়। বাংলার সরকারী কর্মীরা কতটা কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মীদের থেকে পিছিয়ে রয়েছে সেই বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক বিস্তারিত পোস্ট করলেন।
কী বললেন সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায়?
জানা গিয়েছে আজ অর্থাৎ শুক্রবার, সকালে কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ এর সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় সমাজমাধ্যমে জানিয়েছেন যে, “প্রচলিত রীতি অনুযায়ী কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স অনুসারে প্রতি ১০ বছর অন্তর অন্তর কেন্দ্র সহ অধিকাংশ রাজ্যে সরকারি কর্মচারিদের বেতন বৃদ্ধি হয় এবং প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর মহার্ঘভাতা বা DA প্রদান করা হয়। সেই হিসেবে ২০১৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রের সপ্তম বেতন কমিশন ঘোষনা করা হয়েছিল এবং সেই নিয়ম লাগু হয় ১ জানুয়ারি ২০১৬ থেকে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার ৫৩ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা বা DA প্রদান করছে।”
আরও পড়ুনঃ এ সপ্তাহে ছক্কা হাঁকাল স্টার জলসা! গীতা না পারুল কে করল বাজিমাত? দেখুন TRP লিস্ট
সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় আরও বলেন যে ‘এখন আর মাত্র দুটি কিস্তি দেওয়া বাকি আছে। অর্থাৎ ১ জানুয়ারি ২০২৫ এবং ১ জুলাই ২০২৫ DA বৃদ্ধি বাকি আছে৷ তাহলেই ২০ কিস্তি সম্পূর্ণ হবে। সেক্ষেত্রে যদি দুটি কিস্তি ৪ শতাংশ করে দেওয়া হয় অর্থাৎ ৪ শতাংশ +৪ শতাংশ। তাহলে মোট ৮ শতাংশ হয়, সে ক্ষেত্রে মোট ৬১% মহার্ঘভাতাকে মূল বেতনে সংযুক্ত করে নয়া অষ্টম বেতন কমিশনের বেতন নির্ধারিত হবে৷ অন্যদিকে সপ্তম বেতন কমিশনে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ছিল ২.৫৭ গুণিতক৷ আর এবার অষ্টম বেতন কমিশনে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর হবে ২.৮৬/২.৮৭৷ সেক্ষেত্রে রাজ্য একদমই নিম্নস্তরে রয়েছে।
২০৩০ এর আগে রাজ্যে সপ্তম বেতন কমিশন নয়!
রাজ্যের বেতন কমিশন নিয়ে এদিন সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় আরও বলেন যে, “২০১৫ সালে ২৭ নভেম্বর বেতন কমিশন গঠন হলে পাঁচবার মেয়াদ বৃদ্ধি ঘটে। এরপর ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নয়া ষষ্ঠ বেতন কমিশন লাগু হয়৷ সেক্ষেত্রে এখনও রাজ্যকর্মীরা ১৪ % হারে মহার্যভাতা হাতে পাচ্ছেন যা কেন্দ্রের থেকে ৩৯% কম৷ যদি রাজ্য সরকার এই ভাবে চলে তাহলে এই রাজ্যে ৭ম বেতন কমিশন গঠন ২০২৬ সাল হলেও তা লাগু হবে ২০৩০ সালে।”