ইন্ডিয়া হুড ডেস্ক: গত দুই সপ্তাহ ধরে বন্যার কারণে অসংখ্য মানুষ ঘরছাড়া হয়ে পড়েছে। জলের স্তর যেন কিছুতেই কমছে না। কয়েকটি জায়গায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ হলেও সেখানেও আশঙ্কা বাড়ছে। কারণ ফের বঙ্গে নিম্নচাপের ভ্রুকুটি দেখা গিয়েছে। যার ফলে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
হাতজোড় করে নমস্কার মুখ্যমন্ত্রীর!
আর এই নিম্নচাপ এবং দুর্যোগের মাঝেই গত সোমবার বিকেলে পূর্ব বর্ধমানে প্রশাসনিক বৈঠক সেরে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে বাঁকুড়ায় আসছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হঠাৎ করে এলাকায় পৌঁছে কনভয় থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন তিনি। বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে চলে যান দামোদরের ধারে। সেখানে দাঁড়িয়ে দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার পরিস্থিতি দেখছিলেন। সেই দৃশ্য দেখে বোঝাই যাচ্ছিল বেজায় চটে গিয়েছেন তিনি। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন উত্তাল স্রোতের দিকে। তার মধ্যেই ব্যারেজের জলের দিকে তাকিয়ে করজোরে প্রণাম করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পর দু’হাত তুলে নমস্কার করে উঠে পড়েন গাড়িতে। আর এই ভিডিও মন কেড়ে নিয়েছে নেটিজেনদের একাংশের।
কেন্দ্রের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী!
অন্যদিকে এদিন দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)-এর উপরে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘রাজ্যটাকে ডুবিয়ে ছাড়বে। আর কাকে কাকে ডোবাবে জানি না। যে ভাবে জল ছাড়া হচ্ছে তাতে যেখান থেকে জল নামতে শুরু করেছে সেখানে আবার জল বাড়তে পারে।’ এ ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ”কলকাতায় সদর দফতর রেখে দেবে, আর এদিকে কলকাতার মানুষের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে জল ছেড়ে দেবে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে মারবে। ঝাড়খণ্ডের জলেই বন্যা হয় পশ্চিমবঙ্গে। ডিভিসির কারণেই প্রতি বছর বাংলায় বন্যা হয়। ‘ম্যান মেড’ বন্যা হয় বাংলায়। পশ্চিমবঙ্গে যে বৃষ্টি হয়, সেটার কারণে বন্যা হয় না। জল ছেড়ে যারা মানুষকে মারে, আমরা তাদের চাই না।”
রাজ্যকে দেওয়া ডিভিসি-র চিঠি প্রকাশ্যে এল সমাজমধ্যমে!
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রকাশ্যে এসেছে রাজ্য সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের এক নির্দেশিকা। আর এই নির্দেশিকা হল সেই নির্দেশিকা যেখানে জল ছাড়ার আগে ডিভিসি রাজ্যকে জানিয়েছিল। এই তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই তা স্পষ্ট হয়েছে। আর তার পরই মমতাকে চরম আক্রমণ শুরু করেছে বিজেপি। প্রকাশ্যে আসা রাজ্য সরকারি মেমো থেকে জানা গিয়েছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর নবান্নে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর থেকে রাজ্যের ৮টি জেলাকে সতর্ক করা হয়েছিল। এবং সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, যে দামোদর রিভার রেগুলেটরি কমিশন ও কেন্দ্রীয় নদী কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, দামোদর ও তার শাখানদীর ওপর বাঁধগুলিতে জলস্তর বেড়ে গিয়েছে। বাঁধগুলি থেকে মোট ২.৫ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হতে পারে।”
Smt. @MamataOfficial visited Durgapur Barrage to inspect the concerning rise of water levels and take account of the flooding situation.
She has left no stones unturned to ensure the safety of people in the face of this man-made disaster! pic.twitter.com/irKCeYbkuS
— All India Trinamool Congress (@AITCofficial) September 23, 2024
এমনকি ডিভিসির তরফে এও জানানো হয়েছে যে ডিভিসির বাঁধগুলি থেকে জল ছাড়ার ফলে এতগুলি জেলা প্লাবিত হওয়া সম্ভবই নয়। তাছাড়া এমন অনেক জেলা প্লাবিত হয়েছে যা দামোদর নদের অববাহিকাতেই অবস্থিত নয়। ঘাটালে বন্যা হয়েছে কংসাবতীর জলে। যেটা ছাড়া হয়েছে মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে। আর সেই জলাধার নিয়ন্ত্রণ করে রাজ্য সরকার। অন্যদিকে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের একাংশে বন্যা হয়েছে ময়ূরাক্ষীর জলে। যেখানে জল ছাড়া হয়েছে মসানজোড় জলাধার থেকে। সেই জলাধারও নিয়ন্ত্রণ করে রাজ্য সরকার। তাই সেই নিরিখে ঘুরে ফিরে একটাই কথা উঠে আসছে তাহলে কি বঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি রাজ্য সরকারের কর্মকাণ্ডের ফলেই ঘটল?