প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: গত বছরের শেষের দিকে আমেরিকার আদালত সরকারি আধিকারিকদের ঘুষ এবং ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য অভিযোগ উঠেছিল আদানির (Adani Group) বিরুদ্ধে। জারি করা হয়েছিল গ্রেফতারি পরোয়ানা। অভিযোগ করা হয়েছিল যে, বাজারের থেকে বেশি দামে সৌরবিদ্যুৎ বিক্রির বরাত পেতে অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের সরকারি আধিকারিকদের মোট ২২৩৭ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন আদানিরা। ‘আদানি গ্রিন এনার্জি’ আমেরিকার শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে, যা বেআইনি। আর সেই আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে একাধিক দেশে।
কিন্তু এদিকে নতুন বছরেও যেন কিছুতেই শান্তিতে থাকতে পারছে না আদানি গোষ্ঠী। তাঁদের বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে একের পর এক দেশ খতিয়ে দেখছে। প্রথমদিকে বাংলাদেশে ইউনূস সরকার ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সংক্রান্ত চুক্তি খতিয়ে দেখার জন্য আইনি এবং তদন্তকারী সংস্থা নিয়োগের প্রস্তাব জানানোর পর পরই একই সুরে সুর মিলিয়েছিল দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। সেই সময় সিলোন ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের মুখপাত্র ধনুষ্কা পরাক্রমসিঙ্ঘে জানিয়েছিলেন যে শ্রীলঙ্কার আগের সরকারের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর বায়ুশক্তি সংক্রান্ত যে চুক্তি হয়েছিল, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নবগঠিত মন্ত্রিসভা। আর সেই আবহে এবার পুরোপুরি বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিল করল শ্রীলঙ্কা।
বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিল শ্রীলঙ্কার!
শ্রীলঙ্কার শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক সংবাদপত্র ডেইলি এফটি-এর একটি প্রতিবেদন সূত্রে জানা গিয়েছে যে দেশের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ চুক্তি এবার বাতিল করল শ্রীলঙ্কা। প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার আদানি গ্রিন এনার্জির সাথে প্রায় ৪৪৮ মিলিয়ন ডলারের বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিল করেছে। আসলে আমেরিকায় আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে আশঙ্কা করছে বিশেষজ্ঞরা। আর এই আবহের মধ্যেই আজ অর্থাৎ শুক্রবার আদানি গ্রুপের তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের বড় পতন দেখা গিয়েছে।
শেয়ারে পড়েছে বড় প্রভাব
জানা গিয়েছে শ্রীলঙ্কার এইরূপ কর্মকাণ্ডে আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ার প্রায় ৩ শতাংশ কমে গিয়েছে। অন্যদিকে আদানি পোর্টের শেয়ার প্রায় এক শতাংশ কমে গিয়েছে। পাশাপাশি আদানি পাওয়ার শেয়ার ১.২৭ শতাংশ কমেছে এবং আদানি এনার্জি সলিউশনের শেয়ার ২.৫৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে। বাদ যায়নি আদানি টোটাল গ্যাস। এক্ষেত্রেও প্রায় ২.৬২ শতাংশ কমেছে এবং আদানি উইলমারের শেয়ার ৩.৭১ শতাংশ কমেছে। এই অবস্থায় মাথায় বাজ পড়ল আদানি গোষ্ঠীর।
আর এই আবহে গত রবিবার ফের বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ বকেয়া মেটানোর জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়েছিল গৌতম আদানির নেতৃত্বাধীন আদানি গোষ্ঠী। সেই চিঠিতে বলা হয়েছিল যে বকেয়া সাড়ে ৮৪ কোটি ডলার মেটানোর জন্য আগামী জুন পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে ভারতের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থাটি। যদি বাংলাদেশ সরকার জুনের মধ্যে বকেয়া শোধ না করে তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং জরিমানা হিসাবে বাড়তি টাকা দিতে হবে বলেও জানানো হয়েছে।